১৯ ওভারের খেলা চলছে। ৯১ রানে ৭ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। আফগানিস্তানের রশিদ-নবীদের আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। এই খেলার নিউজ যদি কভার করতে হতো তাহলে হেডলাইন কী দিতাম? মাথায় তখন সেটাই ঘুরছিল। আরব সাগরের তীরে আফগান রূপকথার মঞ্চায়ন! মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যেন নয় অস্ট্রেলিয়া যেন ডুবে যাচ্ছিল পাশের আরব সাগরেই।
ম্যাচে একটি গাথা লেখা হয়েছে বটে। তবে তা আফগানরা লেখেনি। অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যা লিখেছেন তা রূপকথা বা ফেইরিটেল নয় তাকে বলা যায় ফোকলোর। যা মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। এক রাজপুত্র আহত হয়েও যুদ্ধ ছেড়ে আসেনি। বরং বিধ্বস্ত পা নিয়ে একাই লড়েছেন। ব্যথায় কুঁকড়ে গেছেন, পা ভারি হয়ে গেছে তবুও ভেঙে পড়েননি। এক সেকেন্ডের জন্য ভাবেননি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাওয়ার। অবিশ্বাস্য ওই ইনিংসকে রূপকথা বলে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। মহাকাব্যিক এই ইনিংসটা ফোকলোর হয়ে যাবে। যা ঘুরবে মানুষের মুখ থেকে মুখে।
কে জানতো ম্যাক্সওয়েল এভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন? মুজিব উর নিজেই কি জানতেন ক্যাচটা ফেলে দেওয়ার পর? ম্যাক্সি আরো একটি ক্যাচ দিয়েছিলেন, তবে মুজিব যেটা ফেলেছেন সেটা ম্যাক্সি নিজেও ভাবতে পারেননি। এলবিডব্লিউর শিকার হননি একটুর জন্য, রান আউট হননি অল্পের জন্য। একটু গুছিয়ে উঠে শুরু করলেন ব্যাট চালানো। এ কে ব্যাট চালানো বলে? যেন তলোয়ার চলেছে। ব্যাটার শতক করবেন, দ্বিশতক করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে উদ্ধার করে জিতিয়ে নেয়া মানুষের কীর্তিকে আপনি রূপকথা কীভাবে বলবেন? এতো কল্পনাকেও হার মানায়। দক্ষতা থাকলে শরীর যেমনই থাকুক কীর্তি বের হয়ে আসবেই।
অ্যাশেজে বেন স্টোকসের ১৩৫ রানের ইনিংস কিংবা ১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিল দেবের ১৭৫ রানের ইনিংস কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেন লোকমুখে এখনও গল্পটা বয়ে যায়? দল শুরুতেই নাকাল হয়ে যায়। প্রতিপক্ষ তখন জয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছে। ওই পর্যায়ে হাল ধরে দলকে জয়ের বন্দরে আনার জন্য ব্যাটারকে মানব থেকে দানবে পরিণত হতে হয়। সবাই পারে না, সব দিন এটা সম্ভবও হয় না।
মুম্বাইয়ে ম্যাক্সওয়েলের ওই ইনিংসটা কেন আলাদা? কামিন্সের ওই দলের বিপক্ষে আফগানিস্তান ২৯১ করে ফেলবে এটাই ছিল বড় চমক। সেই চমকও ঢাকা পড়ে যায় ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার ঘটনায়। এরপর ম্যাক্সওয়েলের কর্মকান্ডে বিলীন হতে থাকে দিনভর ঘটা সব ঘটনা। এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু বলিউডের মাটিতে খেলা হবে আর এতে টেনশন থাকবে না তা তো হয় না। ম্যাক্সি পায়ের ব্যথা নিয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলেন। এক সময় ব্যাটাররা রানার নিতে পারতেন। সেই নিয়ম আর নেই। ব্যথা সহ্য করতে না পারলে ড্রেসিংরুমে চলে যান। আর কোনো উপায় নেই। এবার শুরু নায়কের প্রত্যাবর্তন। ম্যাক্সি সিঙ্গেল নেয়া বাদ দিলেন। এবার শুরু হলো চার-ছয়ের বৃষ্টি। জয় তো এলোই, ডাবল সেঞ্চুরিও এলো।
সিনেমার শহর মুম্বাই। মুম্বাইয়ের রাস্তায় নাকি চিত্রনাট্যকার বা স্ক্রিপ্টরাইটার মেলে। ওয়াংখেড়ের ৩০ হাজারের বেশি ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে নিশ্চয়ই সেদিন কোনো না কোনো স্ক্রিপ্টরাইটার ছিল। এত সুন্দর গোছানো স্টোরির আইডিয়া মিলবে প্রতিদিন?