অস্ট্রেলিয়ার কাছে আরও একটা সেমিফাইনাল হারলো দক্ষিণ আফ্রিকা

হতাশ হয়ে মাঠেই বসে পড়েন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।

এবারও হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। ইতিহাসকে পাল্টাতে পারলো না প্রোটিয়ারা। সেই সেমিফাইনালেই আটকে গেল। পঞ্চম বারের মতো সেমিফাইনালে খেলেও বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট পেল না দক্ষিণ আফ্রিকা।

লো স্কোরিং ম্যাচ হলেও আজ জয়টা সহজে পায়নি অজিরা। প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২১২ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়া আজ তিন উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলো। এর ফলে ঘুরেফিরে পুরনোদের হাতেই যাচ্ছে বিশ্বকাপের শিরোপা।

আগামী রবিবার শিরোপার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত।

প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা যে কতটা ভয়ংকর দল সেটা এই বিশ্বকাপে প্রতিটা দলই হারে হারে টের পেয়েছে। কিন্তু সেমিফাইনালে সেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে আজ খুঁজেই পাওয়া গেল না। টস জয়টা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আশীর্বাদই মনে করা হয়েছিল।

বিশ্বকাপের লিগ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য টস জয় মানে ম্যাচ জয় বিষয়টা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ প্রথমে ব্যাটিং মানেই ৩০০ প্লাস স্কোর। যে ম্যাচে তারা প্রথমে ব্যাট করেছে এমনটি হয়েছে। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তো ৪২৮ রান করেছিল তারা। যা এ বছর কোন দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

এমনকি গত ১২ অক্টোবর বিশ্বকাপের লীগ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩১১ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া ১৭৭ রানে অলআউট হওয়ায় সেই ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ১৩৪ রানে। কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভেঙে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপ।

অজি বোলারদের বিপক্ষে আজ খেলেছেন ডেভিড মিলারই। তার ১০১ রান বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বাকি ১০ ব্যাটসম্যান করেছেন ১০০ রান। এর মধ্যে হেনরিক ক্লাসেনের ৪৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের চতুর্থ সর্বোচ্চ ১১ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে। ডেভিড মিলার ও হেনরিক ক্লাসেন যদি অন্য ব্যাটারদের মতো ব্যাট করতেন তাহলে হয়তো ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ভয়ঙ্কর শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার। ২৪ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারায় তারা। এই বিপর্যয় সামাল দেন ডেভিড মিলার ও হেনরিক ক্লাসেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১১৩ বলে ৯৫ রান যোগ করেন তারা। ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন হেনরিক ক্লাসেন। ডেভিড মিলারকে সঙ্গ দিতে পারেননি অন্য কোন ব্যাটার। একাই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১৬ বল খেলে ১০১ রানে আউট হয়েছেন তিনি।

তার আউটের মধ্য দিয়ে নবম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৭ ওভার ২ বলে তাদের সংগ্রহ তখন ৯ উইকেটে ২০৩ রান। আর নয় রান যোগ করে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২১২ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন জস হ্যাজেলউড ও ট্রাভিস হেড।

২১৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হলেও প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্রুতই দ্বিতীয় উইকেট হারায় তারা। উদ্বোধনী ছুটিতে ৬০ রান যোগ করেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। ঝড়ো ব্যাটিং করে ১৮ বলে ২৯ রান করেন ওয়ার্নার। তাই এই ছোট ইনিংসে ছক্কা ছিল চারটি আর চারের মার ছিল একটি।

ওয়ার্নার ফেরার পর কোন রান না করেই আউট হয়েছেন মিচেল মার্শ। এরপর স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে একটি পার্টনারশিপ গড়ার চেষ্টা করেন ট্রাভিস হেড। তবে দ্রুত রান তুলে ৪৮ বলে ৬২ রান করে আউট হয়ে যান ট্রাভিস হেড।

এই জুটি ভাঙ্গার পর মারনাস লাবুশেন ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলকে দ্রুত আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দেখে শুনে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে যাচ্ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। তবে স্মিথ ও জস ইংলিশকে আউট করে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

জয়ের জন্য তখনও ২০ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার। হাতে ছিল তিন উইকেট। টেল এন্ডারদের উপর ভর করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্ক ১৬ ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ১৪ রানে অপরাজিত থেকে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন।

Exit mobile version