ছয় ম্যাচ পর জয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে বাংলাদেশ

টানা ছয় ম্যাচ হারের পর অবশেষে বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর জিততেই ভুলে গিয়েছিল টাইগাররা। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাকিবের দল। প্রশ্ন উঠেছিল এক জয় দিয়েই কি শেষ হবে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ মিশন। শান্ত ও সাকিবের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শ্রীলংকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ভারত বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয় পেল বাংলাদেশ।

টাইগারদের আরও এক ম্যাচ বাকি অস্ট্রেলিয়ার সাথে। এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলের নবম স্থান থেকে সপ্তম স্থানে উঠে এল বাংলাদেশ। আর শ্রীলংকা সাত থেকে নেমে গেল আটে।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের লড়াই থেকে অনেক আগেই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। তাই এই ম্যাচে দু’দল কি করতে পারে তার চেয়েও বড় আলোচনা ছিল দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়ে। দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে কিনা সেই শঙ্কাও ছিল। শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের জয় নিয়েও। শান্ত ও সাকিব জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেলেও মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর বিদায়ে লঙ্কান শিবিরে হাসি ফুটলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

আগের ম্যাচের ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট দেয় শ্রীলংকা। ভারতের বিপক্ষে ৫৫ রানে আউট হয়ে ৩০২ রানে হারের লজ্জা পেয়েছিল লঙ্কানরা। টস হেরে ব্যাটিং নিয়ে তাদের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দলীয় ৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। কুশল পেরেরাকে চার রানে বিদায় করেন শরিফুল ইসলাম। এরপর কুশল মেন্ডিসকে সাথে নিয়ে বড় জুটি গড়তে যাচ্ছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা।

কুশল মেন্ডিসকে ১৯ রানে আউট করে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। এই জুটি থেকে আসে ৬৩ বলে ৬১ রান। মেন্ডিস ফেরার পরের ওভারেই আউট হয়ে যান পাথুম নিশাঙ্কা। ৪১ রান করার পর তাকে আউট করেছেন তানজিম হাসান সাকিব। ৭২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শ্রীলংকার হয়ে হাল ধরেন সামারাভিকরামা ও আসালাঙ্কা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৯ বলে ৬৩ রান করেন তারা। সামারাভিকরামার উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৪১ রান করেন তিনি।

এরপরই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। ক্রিকেট বিশ্বে যা প্রথম। টাইমড আউট হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। দুই মিনিট পার হয়ে গেলেও ব্যাটিংয়ের জন্য মাঠে নামতে পারেন নি তিনি। ফলে আম্পায়ার আউট দেন ম্যাথিউসকে।

দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও আসালাঙ্কার ব্যাটে ভর করে ফাইটিং স্কোর গড়ে শ্রীলংকা। ১০৫ বলে ১০৮ রান করেন তিনি। আর শ্রীলংকা ৪৯ ওভার ৩ বলে ২৭৯ রানে অলআউট হয়। তানজিম হাসান সাকিব ৩ উইকেট নিলেও ৮০ রান দিয়েছেন। শরিফুল ৫১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। সাকিব আল হাসানও ২ উইকেট নিয়েছেন ৫৭ রান দিয়ে।

২৮০ রানের টার্গেট খেলতে নেমে দুই ওপেনিং ব্যাটারই ব্যর্থ। দলীয় ১৭ রানে তানজিদ হাসান ও ৪১ রানে লিটন দাস আউট হয়েছেন। তানজিদ ও লিটন ২৩ রান করেন। এরপর বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। রানের দেখা পেয়েছেন তারা। দারুণ ব্যাট করেছেন দু’জনে।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শতরানের পার্টনারশিপ গড়েন শান্ত ও সাকিব। হাফ সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির পথেই যাচ্ছিলেন দু’জনে। দূভার্গ্য দু’জনেরই। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌছাতে পারেন নি। ৮২ রানে সাকিবকে আউট করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। এর ফলে ১৬৯ রানে ভাঙে এই জুটি। ১৪৯ বল খেলে এই রান সংগ্রহ করেন সাকিব ও শান্ত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যে কোন উইকেট জুটিতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।

সাকিব আউট হওয়ার এক রান পরেই আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাথিউস তার পরের ওভারেই শান্তকে বোল্ড আউট করেন। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারার হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত। ৩৩ ওভার ২ বলে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ২১১ রান।

জয় থেকে খুব বেশি দূরে না থাকলেও বাংলাদেশ চাপে পড়ে যায় দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট হলে। ১০ রান করে আউট হয়েছেন মুশফিক। আর রিয়াদ করেন ২২ রান। রিয়াদ যখন আউট হয়েছেন জয় থেকে তখনও ২৫ রান দূরে বাংলাদেশ। হাতে চার উইকেট।

এরপর মেহেদী মিরাজকে আউট করতে পারলেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি শ্রীলংকা। তৌহিদ হৃদয়ের ৭ বলে অপরাজিত ১৫ রানে ৫৩ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। লঙ্কান বোলার দিলশান মাদুশাঙ্কা নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন থিকসানা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।

Exit mobile version