দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এবার বিশাল ব্যবধানে হারলো নিউজিল্যান্ড

এবারের বিশ্বাকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে বড় ব্যবধানে পরাজিত করছে। শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের পর এবার নিউজিল্যান্ডেরও একই পরিণতি হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।

প্রথমে ব্যাট করে কুইন্টন ডি কক ও রসি ভ্যান ডার ডুসেনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৩৫ ওভার ৩ বলে মাত্র ১৬৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। এই জয়ের ফলে ভারতকে টপকে আবারও বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

সাম্প্রতিক ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়া যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। প্রতিপক্ষের বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ে রানের পাহাড় গড়ছেন তারা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ রেকর্ডের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা।

ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে টানা আট ম্যাচে তিনশো’র উপর রান করা প্রথম দল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক বিশ্বকাপে সবেচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখন দক্ষিণ আফ্রিকার। এক বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার ডাবল সেঞ্চুরির পার্টনারশিপের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন কুইন্টন ডি কক ও ভ্যান ডার ডুসেন।

পুনেতে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত শুরুতে ভালো মনে হলেও নিউজিল্যান্ড পরে বুঝতে পেরেছে তাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। দলীয় ৩৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে আউট করে নিউজিল্যান্ড হাসিখুশি থাকলেও তাদের এই হাসি আস্তে আস্তেই মিলিয়ে গেছে। কিউই বোলারদের চরম হতাশ করেছেন কুইন্টন ডি কক ও ভ্যান ডার ডুসেন। এই জুটি ভাঙতে নিউজিল্যান্ডের কোন কিছুই কাজে আসছিল না। সেঞ্চুরি করেছেন দু’জনই।

ডি কক যে ফর্মে আছেন তাতে হয়তো বিশ্বরেকর্ডই গড়ে ফেলবেন। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি সেঞ্চুরির রেকর্ড ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ২০১৯ বিশ্বকাপে এই রেকর্ড গড়েছিলেন রোহিত। ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারার চার সেঞ্চুরির রেকর্ডকে টপকে গিয়েছিলেন তিনি। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে কুমার সাঙ্গাকারার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন কুইন্টন ডি কক। এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে তার নামের পাশে চার সেঞ্চুরি।

ডি কককে ১১৪ রানে আউট করে এই জুটি ভাঙেন টিম সাউদি। কিন্তু ততক্ষণে দু’শো রানের পার্টনারশিপ গড়েন কুইন্টন ডি কক ও ভ্যান ডার ডুসেন। এই বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ডাবল সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ গড়লেন তারা। এক বিশ্বকাপে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে তিলকারত্নে দিলশান ও উপল থারাঙ্গা দুইবার ডাবল সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। শতকের দেখা পেয়েছেন রসি ফন ডার ডুসেনও। ১১৮ বলে ১৩৩ রান করেছেন তিনি।

ডি কককে আউট করে আরও বিপদ বাড়ায় নিউজিল্যান্ড। কারণ ব্যাট হাতে ডেভিড মিলার রীতিমতো কিলার হয়ে উঠেন। ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন মিলার। ৫০ ওভার শেষ হওয়ার আগের বলে আউট হয়েছেন ডেভিড মিলার, করেছেন ৩০ বলে ৫৩ রান।

হেনরিক ক্লাসেনের ৭ বলে ১৫ রানে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ নিয়ে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে টানা অষ্টম বাবের মতো তিনশো’র উপর রান করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রেকর্ড নেই অন্য কোন দলের। প্রথমে ব্যাট করে টানা সাত ইনিংসে তিনশো’র উপর রান করার আগের রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের।

দক্ষিণ আফ্রিকার ছয় ব্যাটার মিলে আজ ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৫টি। সব মিলে এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৮২টি ছক্কা মেরেছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। এখানেও রেকর্ড় গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখন তাদের দখলে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ৭৬টি ছক্কা মেরেছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। যা এতদিন ছিল রেকর্ড।

দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড় দেখে খেই হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। ৬৭ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় তারা। দলীয় ৮ রানে ডেভন কনওয়ে, ৪৫ রানে রাচিন রবিন্দ্র, ৫৬ রানে উইল ইয়ং ও ৬৭ রানে টম লাথাম আউট হয়েছেন।

দ্রুত টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। হাল ধরতে পারেন নি কেউই। আসা যাওয়ার মাঝেই ছিলেন দলের ব্যাটাররা। সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন গ্লেন ফিলিপস।

দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও অসাধারণ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের রানের চাপায় পিষ্ট হয়েছে অনেক দলই। পরাজয়ের ব্যবধান কতোটা কমাতে পারে নিউজিল্যান্ড সেটাই ছিল দেখার। শ্রীলংকাকে ১০২ রানে, অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৪ রানে, ইংল্যান্ডকে ২২৯ রানে ও বাংলাদেশকে ১৪৯ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার নিউজিল্যান্ডও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বড় ব্যবধানে হারের তালিকায় নাম লেখালো।

১৯০ রানে ম্যাচ হেরেছে নিউজিল্যান্ড। ৩৫ ওভার ৩ বলে ১৬৭ রানে অলআউট হয়েছে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার কেশব মহারাজ ৪৬ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নেন মার্কো জানসেন।

Exit mobile version