ভারতের ৩৫৭ রানের জবাবে ৫৫ রানে অলআউট শ্রীলংকা

এশিয়া কাপের ফাইনালের ভূত আরেকবার ভর করলো শ্রীলংকার ঘাড়ে। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ রানে অলআউট হয়েছিল শ্রীলংকা। ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১০ উইকেটে আর ২৬৩ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপে এসে উন্নতি হয়েছে শ্রীলংকার। এশিয়া কাপের ফাইনালের চেয়ে ৫ রান বেশি করেছে তারা। অর্থাৎ ৫৫ রানে অলআউট হয়েছে লঙ্কানরা। ভারত ম্যাচ জিতেছে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে।

প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান করেছিল ভারত। সাত ম্যাচের সবগুলো জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে আবারও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এল ভারত। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতই একমাত্র অপরাজিত দল।

শুন্য রানে এক উইকেট, ২ রানে দুই উইকেট, ২ রানে তিন উইকেট, ৩ রানে চার উইকেট। কোন দলের এমন চরম বিপর্যয়ের শুরু ক্রিকেট বিশ্বে শুধু একবারই আছে। ২০১৫ সালে ক্রাইস্টচার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম চার উইকেট পড়েছিল মাত্র ১ রানে। এবার ভারতের বিপক্ষে শ্রীলংকার চার উইকেট পড়লো তিন রানে।

যেন কাটা বিছানো উইকেটে খেলতে নেমেছিল শ্রীলংকার ব্যাটাররা। মোহাম্মদ শামী ও মোহাম্মদ সিরাজের বোলিংয়ে একেবারে এলোমেলো শ্রীলংকার ব্যাটিং। দলীয় ১৪ রানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা। ২২ গজে টিকে থাকটা যেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল শ্রীলংকার ব্যাটারদের। এক সময় মনে হচ্ছিল ৩০ রানও হয়তো করতে পারবে না। তবে থিকশানার ১২ ও রাজিথার ১৪ রানে ৫০ পার করে শ্রীলংকা। ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি তারা। ১৯ ওভার ৪ বলে ৫৫ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলংকা। শামী ১৮ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৩ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ।

এদিকে এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে নিজেদের শক্তি দেখাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রান করে। আজ ভারতও শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৩৫৭ রান করেছে। তবে ৮ উইকেট পড়ে ভারতের। ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান। বিশাল এই রান ভারত জমা করে কোন ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোন সেঞ্চুরি ছাড়া কোন দলের সবেচেয়ে বেশি রান করার ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোন ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া ৮ উইকেটে ৩৪৮ রান করেছিল পাকিস্তান।

শ্রীলঙ্কার আমন্ত্রণে ভারত ব্যাটিংয়ের শুরুতেই অধিনায়ক রোহিত শর্মার উইকেট হারায়। প্রথম বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে আরো একটা দারুণ ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। তবে তার ইনিংসটি স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দুই বলের। পরের বলেই বোল্ড হন তিনি। শুরুতে রোহিত শর্মাকে হারালেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। ওপেনার শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি শুরুর বিপর্যয় এড়িয়ে দলকে শক্ত অবস্থান পৌঁছে দেন। তারা যেভাবে ব্যাটিং তান্ডব শুরু করেছিলেন শেষ পর্যন্ত তাদের যে ৩৫৭ রানে আটকে রাখা গেছে তা শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তির বিষয়। তবে দুর্ভাগ্য কোহলি ও গিলের। দুইজনই অল্পের জন্য সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কোহলি আউট হয়েছেন ৮৮ রানে। আর শুভমান গিল ৯২ রানে। মাত্র তিন রানের ব্যবধানে এই দুই উইকেট তুলে নেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। শেষ পর্যন্ত তিনি ৫ উইকেট নিয়েছেন। এ জন্য তার খরচ হয়েছে ৮০ রান। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যে সব বোলার ৫ উইকেট নিয়েছেন তাদের মধ্যে এটা দ্বিতীয় খরুচে বোলিং। এর থেকে বেশি রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন আদিল রশিদ। ২০১৯ সালে ৮৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

কোহলি ৮৮ রান করতে খেলেছেন ৯৪ বল। এগারটি বাউন্ডারি তার ইনিংসে। তবে শুভমান গিলের ইনিংসটি ছিল আরো আক্রমণাত্মক। ৯২ রান করতে সমসংখ্যক বল খেলেছেন তিনি। তার ইনিংসেও ১১টি বাউন্ডারি ছিল। সে সঙ্গে ওভার বাউন্ডারি ছিল দুইটি। তবে উভয়ের ইনিংস খুব অল্প রানে শেষ হয়ে যেত। উভয়েই ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর দিয়ে শেষ ১০ ওভারে টর্নেডো বয়ে গেছে। এ সময়ে ৯৩ রান নেয় ভারত। শ্রেয়াস আইয়ের হাতে এ সময় নাভিশ্বাস ওঠে শ্রীলঙ্কার বোলারদের। বল কোথায় ফেলবেন সে জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছিেলেন না। যেখানেই বল ফেলেন সেখান থেকে আইয়ের বলকে সীমানার বাইরে ফেলছিলেন।

কোহলি ও গিলের পাশাপাশি শ্রেয়াস আইয়ের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। মাত্র ৫৬ বলে করেছেন ৮২ রান। তিনটি বাউন্ডারি ছিল তার ইনিংসে। আর ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন ছয়টি।

মাদুশাঙ্কা ছাড়া অন্য কোনো বোলার সুবিধা করতে পারেননি।

Exit mobile version