ভারতের মাটিতে চলমান বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো পার করছে আফগানিস্তান। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারানোর পর আজ আরেক সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাকে হারিয়েছে আফগানরা। রহমত শাহ, হাসমতউল্লাহ শাহিদী ও আজমতউল্লাহ উমরজাইয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে তারা।
৭ উইকেটে লঙ্কানদের হারিয়ে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে আফগানরা। প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ ওভার ৩ বলে ২৪১ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। জবাবে ২৮ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌছে যায় আফগানিস্তান।
পুনেতে টস জিতে শ্রীলংকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আফগানিস্তান। শুরুর ধাক্কা কাটাতে পারলেও ইনিংসের শেষ অর্ধেক অস্থিরতায় কাটে শ্রীলংকার। তাই যেখানে মনে হচ্ছিল আফগানিস্তানকে বড় টার্গেট দিতে পারবে সেটা আর হয়ে উঠেনি। ২ উইকেটে ১৩৪ রান থেকে ২৪১ রানে অলআউট হয়েছে তারা। এর মধ্যে ৫১ রানে আবার ৫ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে শ্রীলংকা। সেই বিপদে হাল ধরতে পারেন নি কোন ব্যাটার।
ফারুকীর পেস আর মুজিবের স্পিন ঘূর্ণিই সর্বনাশ করেছে শ্রীলংকার। ওপেনিং জুটি যুতসই হয়নি। ৫ ওভার ২ বল খেলে ২২ রান আসে উদ্বোধনী জুটি থেকে। দিমুথ করুনারত্নে করেছেন ১৫ রান। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার পাথুম নিসাঙ্কা ৪৬ রান করেছেন। শ্রীলংকার ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রান। অর্থাৎ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান নি কোন ব্যাটার। বোলারদের উপর চড়াও হয়েই খেলতে পছন্দ করেন কুশল মেন্ডিস। তার ব্যাট যখন ছুটে তখন শ্রীলংকার রানের গতিও বাড়ে তড়তড় করে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই মারমুখী মেজাজে তাকে দেখা যায় নি। তাই ধীরগতিতেই এগিয়েছে শ্রীলংকার রানের ইনিংস।
তবে কুশল মেন্ডিস যতক্ষণ ছিলেন শ্রীলংকা বড় রানের সম্ভাবনাও ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু দলীয় ১৩৪ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন মেন্ডিস। ৫০ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। মেন্ডিসকে আউট করার পর তার পরের ওভারেই সামারাবিক্রমাকে বিদায় করেন মুজিব। ভালোই ব্যাট করছিলেন সামারাবিক্রমা। ৪০ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। এরপর ছোট ছোট তিনটি ইনিংস খেলেছেন আসালাঙ্কা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও থিকশানা। আসালাঙ্কা ২২, ম্যাথিউজ ২৩ ও থিকশানা ২৯ রান করেন। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট পরায় ৫০ ওভারও শেষ করতে পারেনি শ্রীলংকা। ৪৯ ওভার ৩ বলে ২৪১ রানে অলআউট হয় তারা। ফারুকী ৪ উইকেট নিয়েছেন। ২ উইকেট নেন মুজিব।
২৪২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ইনিংসের চতুর্থ বলে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বোল্ড করেন মাদুশাঙ্কা। কোন রান না করেই আউট হয়েছেন গুরবাজ। শুরুর ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দেয় আফগানিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটেই ৭৩ রান যোগ করেন ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। ৩৯ রান করে আউট হয়েছেন ইব্রাহিম জাদরান। তাকেও আউট করেন মাদুশাঙ্কা।
তিন নম্বরে নামা রহমত শাহ দারুণ ব্যাট করেছেন। আফগানদের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ৭৪ বলে ৬২ রান করে আউট হয়েছেন রহমত। তার বিদায়ের পর আর কোন ক্ষতই লাগেনি আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ে। বাকি কাজটা সেরেছেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদী ও আজমতউল্লাহ উমরজাই। ১০৪ বল খেলে দু’জনে ১১১ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপ গড়েন।
মারমুখী মেজাজে ছিলেন আজমতউল্লাহ। ৬৩ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর হাসমতউল্লাহ ৭৪ বলে ৫৮ রান করে খেলা শেষ করেন। ৪৫ ওভার ২ বলে ৩ উইকেটে ২৪২ রান করে জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।
ছয় ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে আফগানিস্তান। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে চার পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলংকা ষষ্ঠ স্থানে।