ফিফা ফুটবল সিরিজ ২০২৬ – হবে আরও বড় পরিসরে
গত বছর মার্চে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশনের (ফিফা) তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় ফিফা ফুটবল সিরিজ। পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বের ৬টি ফুটবল কনফেডারেশনের আওতায় ২৪টি অ্যাসোসিয়েশনের কিছু আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে ফিফা। আর তাতে বেশ সাফল্য এসেছে বলে দাবি করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এবার তাই ফিফা ফুটবল সিরিজ ২০২৬ আরও বড় পরিসরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ফিফা। নারী ও পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে এবার এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাঝে ফাঁকা সময়ে এই সিরিজের ম্যাচগুলো হবে।
গত বছর মার্চে ৬টি ফুটবল কনফেডারেশনের অধীনে মোট ২৪টি দল নিয়ে হয়েছে ফিফা ফুটবল সিরিজ। মূলত সেবারের আয়োজন ছিল ফিফা পরিকল্পনা অনুসারে একটি ‘পাইলট’ প্রকল্প। সেটি সাফল্যের মুখ দেখাতেই এবার আগামী বছর এই আসরটি ভালোভাবে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত আসরে এএফসি (এশিয়া) থেকে ভুটান, ব্রুনেই, শ্রীলঙ্কা, মঙ্গোলিয়া ও কম্বোডিয়া, সিএএফ (আফ্রিকা) থেকে আলজেরিয়া, কেপ ভার্দি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, দক্ষিণ আফ্রিকা, গিনি, তানজানিয়া ও তিউনিসিয়া, কনকাকাফ (উত্তর ও মধ্য আমেরিকা) অঞ্চল থেকে বারমুডা ও গায়ানা, কনমেবল (লাতিন আমেরিকা) অঞ্চল থেকে বলিভিয়া, ওএফসি (ওশেনিয়া) থেকে নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি ও ভানুয়াতু এবং উয়েফা (ইউরোপ) ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া, অ্যান্ডোরা ও আজারবাইজান অংশ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ম্যাচের ব্যস্ততার মধ্যেই ফাঁকা সময়ে অন্য কনফেডারেশনের দলের সঙ্গে আরেক কনফেডারেশনের দলের ফুটবল ম্যাচ সুবিধামতো ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও তাই হবে। আর এই ম্যাচগুলোর ব্যয়ভার ফিফা তার আয়োজক সদস্য অ্যাসোসিয়েশনকে প্রদান করে থাকে।
ফিফা ফুটবল সিরিজ
২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর মূলত ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড সিরিজ’ করতে প্রস্তাবনা ওঠে ফিফায়। মূলত অন্য কনফেডারেশনের জাতীয় দলের সঙ্গে আরেক কনফেডারেশনের দলের খেলার সুযোগ বাড়াতেই এই প্রস্তাব করা হয়। ২০২৩ সালের ১৬ই মার্চ ৭৩তম ফিফা কংগ্রেসে পুনঃরায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো এই সিরিজ আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে ২০২৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয় ‘ফিফা ফুটবল সিরিজ’ নামে।
এবার ২০২৬ সালের আসরটি হতে যাচ্ছে প্রথমবারের মতো পূর্ণমাত্রার একটি বড় আয়োজন। কারণ আসন্ন সিরিজে অংশ নেবে আরও অনেকগুলো ফিফা সদস্য অ্যাসোসিয়েশন (জাতীয় দল)। আর সেজন্য আয়োজকও বাড়বে, পরিসর বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপি ফুটবল দর্শক-ভক্তদের মাঝেও এর আকর্ষণ ছড়িয়ে পড়বে। আগ্রহের মাত্রা বাড়াতে প্রথমবারের মতো নারী ফুটবল দলগুলোরও অংশগ্রহণ করানো হবে এবার।
বৈশ্বিক ফুটবলের উন্নয়ন
পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে আরও অর্থপূর্ণ ও অনেক আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করার। ফিফা বিশ্বাস করে এই আয়োজন বৈশ্বিক ফুটবলের উন্নয়ন আরেকটু ত্বরান্বিত করবে। কারণ বছরের পর বছর এক কনফেডারেশনের জাতীয় দলের সঙ্গে অন্য কনফেডারেশনের জাতীয় দল খেলার সুযোগ পায় না। এই ফুটবল সিরিজের মাধ্যমে তেমন ম্যাচও আয়োজনের রাস্তা পাওয়া সম্ভব হবে। ২০২৩-২০২৭ পর্যন্ত যেসব আন্তর্জাতিক ম্যাচ রয়েছে সেই সূচি পর্যালোচনা করেই এই ফুটবল সিরিজের ম্যাচগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে। ফিফার মূল লক্ষ্য প্রতিযোগিতার একটা ভারসাম্য বিধান করা, কৌশলগত দিকসমূহের বিকাশ ঘটানো ও আন্তঃমহাদেশীয় ফুটবল সংস্কৃতির বিনিময়।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো বলেছেন,
ফিফা সিরিজ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে দক্ষ খেলোয়াড়, কোচদের জন্য এবং অবশ্যই ভক্তদের জন্যও দারুন কিছু দেখার। ফুটবলের বৈচিত্র্যতা ও বিশ্বায়ন সম্ভব হবে অর্থপূর্ণ ম্যাচসমূহ আয়োজনের দ্বারা। ২০২৬ সালের সংস্করণটি পুরুষ ও নারীদের ফুটবল এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। ফিফা সিরিজের লক্ষ্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দলগুলোকে একত্র করে খেলাটিকে প্রতিটি পর্যায়ে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং একেবারে সমাজের প্রতিটি স্তরকে বৈশ্বিক মঞ্চে আনা।
পুরো বিশ্বেই এই ফিফা সিরিজে অংশগ্রহণের জন্য বেশ আগ্রহের তৈরি হযেছে। ফিফা এখুনি তাই এই প্রতিযোগিতার বিস্তৃত একটি কাঠামো জানিয়ে দিতে পারে এবং জানাতে পারে যারা আয়োজক হতে চায় তাদের নাম। জানা গেছে ছেলেদের ম্যাচ আয়োজন করতে চায় অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, মৌরিশাস, পুয়ের্টোরিকো, রুয়ান্ডা ও উজবেকিস্তান। অন্য সদস্য অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছে ফিফা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তাই আরও অনেক আয়োজকের নাম নিশ্চিত হতে পারে।
নারীদের ফিফা সিরিজের অভিষেক ঘটবে এবার ব্রাজিল, আইভোরিকোস্ট ও থাইল্যান্ডে। ২০২৬ সালের শুরুতেই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরবে ফিফা।
