২০২৫ এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বহুজাতিক এই টুর্নামেন্টের ভাগ্য নির্ধারণ হওয়ার কথা বৃহস্পতিবার, ঢাকায় আয়োজিত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। তবে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতার কারণে সেই সভাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘জিও সুপার’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পরিকল্পিতভাবে এই টুর্নামেন্ট ভেস্তে দিতে তৎপর। যদি সত্যিই এশিয়া কাপ বাতিল হয়ে যায়, তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রায় ১২৫ কোটি পাকিস্তানি রুপি (পিকে আর) আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা।
এ নিয়েই সমালোচনার মুখে পড়েছেন পিসিবির চেয়ারম্যান ও এসিসির বর্তমান সভাপতি মহসিন নকভি। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানও ঢাকায় এসিসি সভা আয়োজনের বিরোধিতা করছে।
এসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভা বৈধ করতে হলে কমপক্ষে তিনটি পূর্ণ সদস্য (টেস্ট খেলুড়ে) দেশের উপস্থিতি এবং সর্বমোট ১০টি পূর্ণ বা সহযোগী সদস্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশের আপত্তির কারণে প্রয়োজনীয় কোরাম পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যা সভাটিকে কার্যকর করার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যদিও কাগজে-কলমে এবারের এশিয়া কাপে স্বাগতিক পাকিস্তান, তবুও বিসিসিআই ঢাকায় এই সভা আয়োজনে আপত্তি জানিয়েছে। ভার্চুয়ালি তারা অংশ নেবে কি না, সেটিও নিশ্চিত নয়। ফলে আয়োজক দেশ ও সূচি চূড়ান্ত করা নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।
সম্প্রতি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মহসিন নকভি আফগানিস্তান সফরে গিয়েছেন। সফরের আনুষ্ঠানিক কারণ ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা, তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি—আসলে এশিয়া কাপ বিষয়ে আফগানিস্তানের সমর্থন আদায় করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য।
তবে আফগানিস্তান অতীত থেকেই ভারতের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত। দেরাদুনে হোম ভেন্যু থাকা ও অন্যান্য কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে, গুঞ্জন আছে—আফগানিস্তান ইতোমধ্যে ভারতকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
এশিয়া কাপ বাতিল হলে বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা খেতে পারে পিসিবি। চলতি অর্থবছরে আন্তর্জাতিক সিরিজ ও এশিয়া কাপ মিলিয়ে তাদের প্রায় ৮৮০ কোটি রুপি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত। এর মধ্যে কেবল এশিয়া কাপ থেকেই ১১৬ কোটি রুপি রাজস্ব আসার কথা। তাছাড়া প্রতিবছর আইসিসির বরাদ্দ থেকে প্রায় ২৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭৫০ কোটি রুপি) ব্যয় করে কার্যক্রম চালায় পাকিস্তান বোর্ড।
ঢাকায় এসিসির নির্বাহী বোর্ড সভায় পিসিবির স্বার্থ রক্ষায় সাবেক সিওও ও পরামর্শক সালমান নাসিরকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন মহসিন নকভি। বর্তমানে তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সব মিলিয়ে কূটনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক জটিলতার মাঝে এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বৃহস্পতিবারের সভা যদি শেষ পর্যন্ত না হয়, তাহলে তা পাকিস্তানের জন্য শুধু কূটনৈতিক নয়, বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণও হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেটীয় উত্তাপ এখনো অব্যাহত। কয়েকদিন আগেই বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস ২০২৫-এ ভারতীয় দল পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায়, যার ফলে সেই ম্যাচ বাতিল করতে হয় আয়োজকদের।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩














