কোনো দেশের খেলাধুলার যাত্রায় এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, আত্মবিশ্বাসেরও মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ভারতের মাদুরাইয়ে চলমান অনুর্ধ্ব ২১ হকি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য তেমনই এক অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বিশ্বকাপ হকির যে কোনো আসরে এই প্রথম বাংলাদেশ খেলছে। আর সেই অভিষেকেই দল দেখিয়েছে দারুণ লড়াই আর উজ্জ্বল সম্ভাবনার ঝলক।
আজ বিকাল পাঁচটায় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।
এর আগে স্থান নির্ধারণী পর্বে ওমানকে ১৩ -০ গোলে এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫- ৩ গোলে হারিয়ে দল তৈরি করেছে দারুণ সাড়া।
এর আগেও গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ -৩ গোলে হারলেও ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কোরিয়ার বিপক্ষে তিন গোলে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করে দল। এরপর ফ্রান্সের বিপক্ষে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে ৩- ২ গোলে হেরে বাংলাদেশ।
এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বড় অনুপ্রেরণা আমিরুল ইসলাম। দলে তার ভূমিকা এতটাই প্রভাবশালী যে তাকে এখন দেশের জুনিয়র হকির পোস্টারবয় বলা হচ্ছে। ১৫ গোল, চারটি হ্যাটট্রিক এবং তিন ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি তাকে পৌঁছে দিয়েছে আলাদা উচ্চতায়। তবুও তার মনে রয়ে গেছে আফসোস। তার কথায় স্পষ্ট সেই খচখচে অনুভূতি। তিনি বলেন, আমাদের ভুলগুলো না হলে অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্স হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারত না।
আমিরুলের কষ্ট আরও একটি জায়গায়।
ইউরোপে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারা। তিনি মনে করেন ইউরোপ ট্যুরটি হলে দল আরও পরিপক্ব হয়ে মাঠে নামতে পারত। কিন্তু ফেডারেশন ভিসার কাগজপত্রই জমা দিতে পারেনি। পরিকল্পনার ঘাটতি আর প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে দল এখন উপলব্ধি করছে কীভাবে ভবিষ্যতে শক্তিশালী দল গড়া যেতে পারে।
গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৩ ০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করে ফেলা ছিল দলের মানসিক দৃঢ়তার অনন্য উদাহরণ। আত্মবিশ্বাসই সেই ম্যাচ ফেরানোর মূল শক্তি ছিল বলে জানালেন আমিরুল। পরেরবার স্থান নির্ধারণী খেলায় আবারও সেই কোরিয়াকে ৫ ৩ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আমিরুল বলেন, আমরা বুঝে গিয়েছিলাম কোরিয়াকে কীভাবে ধরতে হবে। সেই পরিকল্পনাই কাজে লেগেছে।
বাংলাদেশের হকিতে এখন প্রশংসার স্রোত। সাবেক তারকা মাহবুবুল এহসান রানা তরুণদের পারফরম্যান্স দেখে দারুণ খুশি। পরিবার, সমর্থক, কোচ সবাই গর্বিত আমিরুলদের এই সাফল্যে। এমনকি আমিরুলের গার্লফ্রেন্ডও আনন্দিত, যদিও তিনি খেলাটি বোঝেন না তেমন। তবুও ভালো লাগার অনুভূতি তো বোঝার দরকার পড়ে না। দলের এই পারফরম্যান্সই প্রমাণ করেছে নতুন প্রজন্ম চাইলে দেশের হকিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে।
এখন চোখ সবার অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে। আর মাদুরাইয়ে লেখা এই নতুন অধ্যায় হয়তো আরও বড় ইতিহাসের পথ তৈরি করে দেবে বাংলাদেশের হকির জন্য।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩



















