বাংলাদেশকে যদি ‘লেফট আর্ম অর্থডক্স স্পিনের অভয়ারণ্য’ বলা হয়, তাহলে কি খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে? শুরু থেকেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একের পর এক বিশ্বমানের বাঁহাতি স্পিনার উঠে এসেছেন। মোহাম্মদ রফিক দিয়ে যে যাত্রা শুরু, তা আজও চলমান। রফিকই বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। এরপর সাকিব আল হাসান ও আব্দুর রাজ্জাক। দুই কিংবদন্তি বাঁহাতি স্পিনার দেশের স্পিন ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।
বর্তমানে জাতীয় দলে এই ঘরানার পরিচিত মুখ তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ। যেখানে তাইজুল টেস্টে নিয়মিত, সেখানে সীমিত ওভারে সাধারণত দেখা যায় নাসুমকে। কিন্তু এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গা হয়নি নাসুমের। তাঁর পরিবর্তে দলে জায়গা পেয়েছেন আরেক বাঁহাতি অর্থডক্স স্পিনার, তানভীর ইসলাম।
বর্তমান শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজের আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সে দলে ছিলেন নাসুম, যদিও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। ডিফেন্সিভ বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও কার্যকর হওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর। প্রায় চার মাস পর বাংলাদেশ আবার ওয়ানডে সিরিজ খেলছে। কিন্তু এবার দলে জায়গা হয়নি নাসুমের। তার জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন কোন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে না খেলা তানভির। অর্থাৎ এটাই তার অভিষেক সিরিজ।
২০২৪-২৫ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নাসুম ও তানভির উভয়েই নিয়েছেন সমান ১৫টি করে উইকেট। ইকোনোমি রেটেও দুজন ছিলেন কাছাকাছি। নাসুমের ৪.৩৯ এর বিপরীতে তানভীরের ৪.৩৪।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তানভীর দুটি ম্যাচে ৫ উইকেট নেন। অন্যদিকে, সেই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নাসুম ৬৭ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছিলেন ২টি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও আমিরাতের বিপক্ষে তানভীর নিয়েছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই তানভীরকে জাতীয় দলে ওয়ানডে অভিষেকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। নির্বাচকরা নিশ্চিত করেছেন, নাসুম এখনই পরিকল্পনার বাইরে নন, তবে কৌশলগত প্রয়োজনে আপাতত তানভীরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তানভীরের অভিষেক যেন নির্বাচকদের সেই কৌশলেরই সঠিক প্রমাণ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিনি একাই ধসিয়ে দেন লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপ। ইনিংসের দশম ওভারে মাধুষ্কাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর তুলে নেন কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, ওয়েলাগাল্লে ও থিকশানার উইকেট। মাত্র একটি ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই জায়গাটা তাঁর সহজেই দখলে নেওয়ার মতো। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।
তানভীরের এই সাফল্য কোনো একদিনের চমক নয়। এটা দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর ধারাবাহিকতার ফসল। নির্বাচকরা হয়তো ভবিষ্যতের বিশ্বকাপ দল নিয়েই ভাবছেন, আর তানভীর সেই ভাবনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩

















