গুঞ্জনটা আগেই ছিল। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশও পেয়েছিল। তবে শেষ দিকে এসে প্রতিপক্ষ আর্লিং হালান্ডকে নিয়ে গুঞ্জন ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছিল। সেই গুঞ্জনের শেকড় মাটিতে খুব বেশি গেড়ে বসার আগেই এসে গেল ৩০ অক্টোবরের রাত। ঘোষণা করা হলো ২০২৩ সালের ব্যালন ডি অর জয়ীর নাম। আর কেউ নন, বিশ্বকাপ জয়ী লিওনেল মেসির হাতেই উঠেছে ব্যালন ডি অর ট্রফি।
রেকর্ড অষ্টমবারের মতো এই সেরার স্বীকৃতির ট্রফি জিতলেন মেসি। ব্যালন ডি অর জয়ের পথে মেসি পেছনে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়ের আর্লিং হালান্ড ও পিএসজির সাবেক সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। এমবাপ্পে তৃতীয় হয়েছেন ঠিকই তবে মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ছিলেন না, যেমনটা ছিলেন হালান্ড।
মেয়েদের বর্ষসেরার ট্রফি জয় করেছেন বার্সেলোনার আইতানা বোমাতি। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এ স্প্যানিশ অসাধারণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন। ক্লাবের হয়ে লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ।
৩৬ বছর বয়সী লিওনেল মেসি এবারের আগে ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২১ এই সেরার ট্রফিটি জয় করছেন। বার্সেলোনার হয়ে সবচেয়ে বেশিবার তিনি এই ট্রফি জয় করেছেন। এবার যখন ট্রফিটি তার হত উঠলো তখন তিনি আর ইউরোপের কোনো ক্লাবের নন বরং যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির খেলোয়াড়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ক্লাবের কোনো খেলোয়াড় এই প্রথম ব্যালন ডি অর ট্রফি জয় করলেন।
মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা আলিং হালান্ড ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। নরওয়ের এই গোল মেশিন ২০২২-২৩ মৌসুমে ৫২ গোল করেছিলেন। ফলে বর্ষসেরা না হতে পারলেও সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার জার্ড মুলার ট্রফি পেয়েছেন তিনি।
মেসির মতো এত বেশিবার কেউ ব্যালন ডি অর জয় করতে পারেননি। পাঁচবার জিতেছেন মেসির চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুয়েফ ও মার্কো ভ্যান বাস্তেন তিনবার করে এইট ট্রফি জয় করেছেন। যদিও বিশ্বকাপ জয় এবং বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স মেসিকে এই ট্রফি এনে দিয়েছে। তবে প্যারিসের মঞ্চে মেসির হাতে এই ট্রফি তুলে দেন ইন্টার মায়ামির কো-অনার ডেভিড বেকহাম।
মায়ামির হয়ে খুব একটা ভালো সময় কাটেনি মেসির। অন্তত যেভাবে শুরু করেছিলেন ইনজুরির কারণে মৌসুমটা সেভাবে শেষ করতে পারেননি। ১৪ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন। ক্লাবের ইতহিাসে প্রথমবারের মতো কোনো ট্রফি জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইনজুরির কারণে বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে না পারায় ক্লাবটি আরো কিছু সাফল্য তুলতে ব্যর্থ হয়। তবে বিশ্বকাপের সময় পুরোপুরি ইনজুরি মুক্ত হয়ে খেলতে পেরেছিলেন। আর তাই সাফল্য একের এক ধরা দেয়।
কাতার বিশ্বকাপে তিনি সাত গোল করেছেন। তিন গোলে সহায়তা করেছেন। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি তার হাতে শোভা পেয়েছিল। এমন সময় ব্যালন ডি অর মেসির হাতে না গেলে একটু বেমানান হতো বৈকি। লিওনেল মেসির কীর্তির আসলে শেষ নেই।
এবারর ব্যালন ডি অর জয়ের মাঝ দিয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে এই মর্যাদার ট্রফি জয়ের কীর্তি গড়েছেন তিনি। এর আগেও এই কীর্তি মেসির ছিল। কিন্তু গত বছর করিম বেনজামা তাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এ কীর্তিতে সবার ওপরে রয়েছেন স্ট্যানলি ম্যাথুজ।
১৯৫৬ সালে ৪১ বছর বয়সে ব্যালন ডি অর জয় করেছিলেন স্ট্যানলি। মেসি তার আট ব্যালন ডি অরের ছয়টি জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে। এই ক্লাবের হয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি গোল করার এবং সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন। পিএসজির হয়ে জয় করেছেন একবার।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের বছরে সপ্তম ব্যালন ডি অর শোভা পেয়েছিল মেসির হাতে। আর এবার বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি পেলেন অষ্টম ব্যালন ডি অর।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মেসি বলেন, যে ক্যারিয়ার আমি পেয়েছে তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আমি সবকিছু অর্জন করেছি। আমি বিশ্বের সেরা দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি। ইতিহাসের সেরা দলের হয়েও আমি খেলেছি। এইসব ব্যক্তিগত ট্রফি জয়ের ব্যাপারটাই আলাদা। কোপা আমেরিকার পর বিশ্বকাপ তারপর এই ট্রফি। ভিন্ন ভিন্ন কারণে এসব জয়ের অনুভূতিও আলাদা।’