স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেটকে যারা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁদের একজন ফারুক আহমেদ। অবশ্যই ওই ব্যাচে থাকা আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, এনামুল হক মনিদের নামও নিতে হবে। ফুটবলের ভরা জোয়ারে ক্রিকেটের ব্যানারটা এই কয়েকজনের হাতেই ছিল। সুযোগ সুবিধা তো দূরের কথা মাঠও ঠিকসময় পেতেন না তাঁরা। সেই ক্রিকেটটাকে এতদূর নিয়ে আসার পেছনের তাঁদের অবদান কেউ ভুলবে না। টাকা উপার্জন না, ক্রিকেটটা তাঁদের কাছে ছিল আবেগ আর দেশের পতাকাকে তুলে ধরার সংগ্রাম।
এত কথা বলা হলো, কেননা এই প্রথম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়েছেন একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেট সমর্থকদের আশা ভরসা নিয়ে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন ফারুক আহমেদ। তিনি এক সময় জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশ নেয়। যে দলে ছিলেন তিনিও।
বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর এক সময়ের নির্ভরযোগ্য এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছে বেশ কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে। আপাতত এই চারটি চাওয়া জানিয়ে রাখলাম।
সবার আগে ক্রিকেট
কোনো ব্যক্তি নয়, সবার আগে থাকবে ক্রিকেট। ব্যক্তিপূজায় নষ্ট হয়েছে দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি। বহু কষ্টে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা এই ক্রিকেট ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের ক্ষেত্র হতে পারে না। কেবল টাকা আয়ের পথ হতে পারে না। সামগ্রিক ক্রিকেটের উন্নয়নে পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। একক ক্ষমতা, দম্ভ, টাকা অর্জনের জন্য যাচ্ছেতাই করা এসব বর্জনের সময় এসেছে।
তৃণমূলে ক্রিকেট
জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট লীগ হয় না প্রায় ১০ বছর ধরে। মরে গেছে স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেট। জেলার স্টেডিয়ামগুলোতে নেই ক্রিকেটের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা। জেলা ক্রিকেট লীগ জীবিত করা প্রয়োজন। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি স্কুল ক্রিকেটকে আরো তৃণমূল পর্যায়ে নেয়া প্রয়োজন। কেবল ওয়ানডে ভার্সন না রেখে টি টোয়েন্টি ও তিনদিনের ম্যাচ নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন তৃণমূলে। তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেট মাঠ ও পিচ এর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অর্থ খরচ হবে কিন্তু বিপরীতে প্রাপ্তিও হবে বেশ।
কোচিংয়ে আসুক দেশ
গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি কোচ দেখা গেছে। অথচ প্রাপ্তি বলতে এখনো নারীদের একটি এশিয়া কাপ জয়, ছেলেদের ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা। যুব বিশ্বকাপ জয় করেছে বাংলাদেশ তবে এর ফলও যে ভরপুর নিতে পারছে তাও না। বেশ কয়েকবছর ধরেই বলা হচ্ছে দেশের কোচদের সুযোগ দেয়ার জন্য। দেশের কোচদের সে দায়িত্ব দেয়া উচিত। বিশেষ করে সাবেক ক্রিকেটারদের এ ব্যাপারে এগিয়ে নিয়ে আসা উচিত।
ব্র্যান্ডিং
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির জয়ের পর বিশ্বে আলোচিত হয় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেট। এরপর টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি। প্রথম টেস্টেই আমিনুল ইসলামের শতক তৈরি করে অনন্য রেকর্ড। ক্রিকেট উন্মাদনার জন্যই বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হতে থাকে। বলা হচ্ছিল, ক্রিকেটকে ব্র্যান্ডকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবে তা এগোয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরে এসেও অনেকদূর এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। যেটা শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র ক্রিকেটবিশ্বও চায়।