মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুখোমুখি হচ্ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল। একদলের সামনে পঞ্চম ও অন্য দলের সামনে প্রথম শিরোপা জয়ের হাতছানি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। সর্বশেষ দুই আসরের শিরোপা তাদের ঘরে। ফলে এবার তাদের সামনে হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানি। অন্যদিকে তিনবার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি উঁচু করে ধরার সৌভাগ্য হয়নি বরিশালের। ফরচুন বরিশালের সামনে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাওয়ার সুযোগ।
কুমিল্লার পঞ্চম ফাইনাল। এর আগে চারবার ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা জিতেছে। অর্থাৎ ফাইনালে হারের রেকর্ড নেই তাদের। অথচ কুমিল্লার এবারের বিপিএল মিশন শুরু হয়েছিল।
বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে হেরেছিলো। প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কাটা সামাল দিতে অনেকটা সময় ব্যয় হয়েছে। প্রথম ৪ ম্যাচে তাদের নামের পাশে ছিল ৪ পয়েন্ট। তখন কোয়ালিফাই নিয়েই শঙ্কা ছিল লিটন দাসদের। তবে এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টানা ৫ জয়ে ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে এক পা দিয়ে রাখে কুমিল্লা।
শেষ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফাইয়ার নিশ্চিত করে তারা। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে টেবিলের শীর্ষে থাকা রংপুর রাইডার্সকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে প্রথম সুযোগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে কুমিল্লা।
দলটার প্রধান শক্তির জায়গা ব্যাটিং অর্ডারে বেশ কয়েকজন হার্ডহিটার। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গী হতে পারেন সুনীল নারাইন। মূলত লিটনের ওপরই থাকবে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব। এই অভিজ্ঞ ওপেনার সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন। তার সঙ্গী নারিন অনেকটা বোনাস। তিনি কিছু রান করে দিলে সেটা হবে বাড়তি পাওয়া।
এরপর আছেন ইনফর্ম তাওহীদ হৃদয়। এই তরুণ ব্যাটার হতে পারেন লিটনের ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে দেখা যেতে পারে জনসন চার্লস, মঈন আলী ও আন্দ্রে রাসেলদের। এই তিনজনই হার্ডহিটার। নিজেদের দিনে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
লোয়ার মিডল অর্ডারে দেখা যাবে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলী অনিককে।
কুমিল্লার বোলিং ডিপার্টমেন্টে স্পিনে নেতৃত্ব দেবেন তানভীর ইসলাম। এই অফ স্পিনারকে প্রয়োজনে সঙ্গ দেবেন মঈন আলী। চোট থেকে ফিরে খেলতে পারেন মুস্তাফিজ। তার সঙ্গে দেখা যেতে পারে মুশফিক হাসানকে।
অন্যদিকে প্রথমবার শিরোপা জয়ের মিশনে থাকা বরিশালের ফাইনালে আসার রাস্তাটা খুব একটা স্বস্তির ছিল না। গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়ে কোয়ালিফাই করে তারা। এলিমিনেটরে চট্টগ্রামকে উড়িয়ে তাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এরপর দ্বিতীয় কোয়ালিফািইয়ারেও রংপুরের বিপক্ষে সহজেই জয় পায় তামিম ইকবালের দল।
ফাইনালে দলটার সবচেয়ে বড় পুঁজি অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞদের ভিড় বেশি হওয়ায় টুর্নামেন্টের শুরুতেই তাদের ‘বুড়োদের দল’ খেতাব দেয়াও হয়। জাতীয় দলের একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন বরিশালে।
ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে দেখা যেতে পারে কাইল মায়ার্সকে। দুইজনই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তিনে খেলবেন সৌম্য সরকার। এই বাঁহাতি ব্যাটারও আসর জুড়ে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে মেলে ধরেছেন। সবমিলিয়ে দলটার টপ অর্ডার নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
চারে দেখা যাবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে। পাঁচে আছেন ডেভিড মিলার। এই প্রোটিয়া ব্যাটার হতে পারেন ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে আরেক ভরসার নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মিডল অর্ডারকে মজবুত করেছে। সবমিলিয়ে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ তাদের।
দলটার স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে আছেন মেহেদি মিরাজ। আর পেস বিভাগে ওবেদ ম্যাকয়, ফুলার, সাইফুদ্দিনদের সঙ্গে আছেন মেয়ার্সও। সব মিলিয়ে জমজমাট এক ফাইনালের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।