বিশ্বকাপ ক্রিকেটে গতরাতে একটা অঘটন ঘটেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড হারিয়ে দিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম দুর্বল দল হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তান। এমন ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন। আসলে এমন অঘটনের জন্য কোনো দল প্রস্তত থাকে না। ছোটো কোনো দলের বড় দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়ের এটা প্রথম ঘটনা নয়। এমন ঘটনা অনেক রয়েছে। এমন কিছু ম্যাচের কথা জেনে নেওয়া যাক।
আয়ারল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৫: বিশ্বকাপের শুরুতেই চমক দেখিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। আইরিশরা ২০১৫ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। চার উইকেটে জিতেছিল উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের আয়ারল্যান্ড। অনেকে আবার এ ম্যাচকে অঘটনের তালিকায় স্থান দিতে রাজি নন। ৮৭ রানে ৪ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ লেল্ডল সিমন্সের শত রানে ৩০৭ রান করে। ২৫ বল বাকি থাকতেই এই রান টপকে গিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। পল স্টার্লিং (৯২) ও এড জয়েস ৮৪ রান করেছিলেন।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ১৯৯৯:
বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে সেবার। টেস্ট স্ট্যাটাসও নাই। অথচ তারা হারিয়ে দিয়েছিল তারকা সমৃদ্ধ পাকিস্তানকে। ৫০ ওভারে ২২৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ১৬১ রানে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তান। অথচ দলে ছিলেন ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার, আব্দুর রাজ্জাক, সাকলাইন মুশতাকের মতো বোলাররা।
বাংলাদেশ-ভারত, ২০০৭: শুধু পাকিস্তান নয়, বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েও চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং বারমুডার সঙ্গে একই গ্রুপে ছিল ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে হার দিয়েই শুরু হয়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ মিশন। ১৯১ রানে করেছিল ভারত। সেই সময় তরুণ মুশফিকুর রহিমের কাছে হেরেছিল ভারত। অপরাজিত ৫৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে অবিষ্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। এই হারটা যে কত বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল পরবর্তীতে ভারত ভালোভাবে টের পেয়েছিল। কেননা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৮৩: বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটনের জম্ম দিয়েছিল কপিল দেবের ভারত। গ্রুপ পর্ব নয়, বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা হারিয়ে দিয়েছিল আগের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই সময়ের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা ছিল অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কপিলরা বিশ্বকাপ জিতবেন তা ভাবাও ছিল কঠিন। সেই অসাধ্য কাজটা করেছিলেন কপিল দেব। ১৮৩ রান করেছিল ভারত। সহজ লক্ষ্য। কিন্তু ৩৩ রানের মাথায় ভিভ রিচার্ডস আউট হতেই সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। ১৪০ রানে শেষ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কেনিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৯৬: অসাধারণ ক্রিকেট খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল পুচকে কেনিয়া। প্রথমে ব্যাট করে কেনিয়া মাত্র ১৬৬ রান করে। এর মধ্যে অতিরিক্ত রান ছিল ৩৭। এমন ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেসেখেলে জয় পাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্র ৯৩ রানে শেষ হয়েছিল ব্রায়ান লারাদের দল। এটাই ছিল বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস।
জিম্বাবুয়ে-অস্ট্রেলিয়া, ১৯৮৩: প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই চমক দেখিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম ম্যাচেই তারা পড়েছিল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু দমে যায়নি তারা। জিম্বাবুয়ে একসময় ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল। সেখান থেকে অধিনায়ক ডানকান ফ্লেচারের ব্যাটে ভর করে ২৩৯ রান করে জিম্বাবুয়ে। অস্ট্রেলিয়া ২২৬ রানে থেমে যায়। উইকেট থাকলেও ছিল না ওভার।
আয়ারল্যান্ড-পাকিস্তান, ২০০৭: ক্রিকেট বিশ্বে আয়ারল্যান্ডের পরিচয় এ ম্যাচ দিয়ে। পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান ১৩২ রান করেছিল। আইরিশ পেসারদের সামনে বোকা বনে গিয়েছিল পাকিস্তানের তারকা ব্যাটাররা। বৃষ্টিতে আইরিশদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২৭ রানে। ৩ উইকেটে জিতে যায় তারা। এ ঘটনার পরদিন হোটেলে পাকিস্তান কোচ বব উলমারের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
কেনিয়া-শ্রীলঙ্কা, ২০০৩: সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেনিয়া খেলেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। একটা নয়, একের পর এক অঘটনের জম্ম দিয়েছিল তারা। স্বাভাবিকভাবেই সেমিফাইনাল খেলতে একাধিক বড় দলকে হারাতে হয়েছিল তাদের। মাত্র ২১০ রান করেও তারা জিতেছিল। ১৩৭ রানে অল আউট হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
জিম্বাবুয়ে-ভারত, ১৯৯৯: দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারত হেরেছিল জিম্বাবুয়ের কাছে। প্রথমে ব্যাট করে ২৫২ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। সেই রান তুলতে শেষ দুই ওভারে ৯ রান দরকার ছিল ভারতের। কিন্তু ২৪৯ রানে আটকে যায় তারা।
জিম্বাবুয়ে-দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৯৯: এই বিশ্বকাপে বড় দলকে হারানো অভ্যাস করেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথমে ব্যাট করে ২৩৩ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। নিল জনসন ছিলেন নায়ক। ৭৬ রান করেছিলেন। বল হাতেও ছিলেন বিধ্বংসী। নতুন বলে তিনি এবং হিথ স্ট্রিক চমকে দিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের। ১৮৫ রানে শেষ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।