আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বিখ্যাত উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’য় কাৎলাহার বিলের কথা আছে। এক সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গুলিতে নিহত হন সংগ্রামী মুনসি বয়তুল্লা শাহ। কাৎলাহার বিলের দুই ধারের মানুষের ধারণা, বিলের উত্তরে থাকা পাকুড়গাছে আসন নিয়ে রাতভর বিল শাসন করে মুনসি। যিনি সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলেন।
বিশ্ব ফুটবলে দিয়াগো ম্যারাডোনা তেমনই এক নাম। বিপ্লবী ও সংগ্রামী ফুটবল চরিত্র। ৩৬ বছর পর ২০২২ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করে। মহা উৎসবের কেন্দ্রীয় চরিত্র লিওনেল মেসির সাথে সারাবিশ্বের কোটি কোটি সমর্থকদের হাতে ছিল আরেকজনের ছবি- তিনি দিয়াগো ম্যারাডোনা। ফুটবল বিশ্বের অসাধারণ এক চরিত্র। যিনি স্বশরীরে না থেকেও আছেন, মেসি-আর্জেন্টিনা-আর্জেন্টিনা ফুটবলের অগণিত ভক্তকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিতে। সব ছাড়িয়ে শুধু ফুটবলকে এগিয়ে নিতে।
আজ ৩০ অক্টোবর। সেই কিংবদন্তী ম্যারাডোনার জন্মদিন।
ক্লাব ফুটবলে সাফল্যের এভারেস্টে চড়া লিওনেল মেসি জাতীয় দলের হয়ে কিছুই করতে পারছিলেন না। ম্যারাডোনা এক সময় তাঁর সরাসরি কোচও ছিলেন। তখনও কিছু হয়নি। অন্য সময় মেসির আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে স্টেডিয়ামেই বসে থাকতেন ম্যারাডোনা। উদ্দাম সমর্থন দিয়ে যেতেন নীল-আকাশিদের। গোল পেলে চিৎকার করতেন গলা ফাটিয়ে।
২০২০ এ ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার পর গ্যালারিতে শূণ্যতা নামেনি। আর্জেন্টিনার খেলার সময় ঠিকই গ্যালারিতে ম্যারাডোনার বিরাট ব্যানার থাকে। ২০২১ সালে মেসির হাতে ধরা দেয় প্রথম কোপা আমেরিকার ট্রফি। সেই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ছবি বেশ সাড়া দেয়। আকাশ থেকে ম্যারাডোনা হাত উঁচিয়ে সাহস দিচ্ছেন মেসিকে। এরপর ফিনালিসিমা ও পরে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ট্রফি। মেসি আর আর্জেন্টিনার বিজয় রথ চলছেই। ম্যারাডোনা নেই কে বললো? ম্যারাডোনা আছেন, হুংকার দিয়ে বিশ্ব ফুটবল শাসন করছেন।
ম্যারাডোনা কেন গুরুত্বপূর্ণ? তিনি শুধুই কি একজন ফুটবলার নাকি ফুটবলকে সারাবিশ্বে পৌঁছে দেয়ার নিপুণ কারিগর? খেলাটা অনেক সুন্দর হতে পারে। খেলাটা জুড়ে শরীরের শক্তির পাশাপাশি আবেগও কাজ করে। এরকম শিল্প ম্যারাডোনাই দেখিয়েছেন। বহু তর্ক-বিতর্কের জন্মও দিয়েছেন। কিন্তু ফুটবলের প্রতি আবেগে সেসব টেকারও কথা না।
ম্যারাডোনার সাফল্যে সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশও হেসেছে। তেমনি ম্যারাডোনার সাথেও কেঁদেছে বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় পরবর্তী প্রজন্মও আর্জেন্টিনা সমর্থন করেছে, স্বপ্ন দেখেছে বিশ্বকাপ জয়ের। স্বপ্ন ভেঙেছে, কেঁদেছেও। আবার স্বপ্ন দেখেছে। এক সময় মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখে উল্লাসেও কেঁদেছে বাংলাদেশের মানুষ। সবকিছুতেই ম্যারাডোনা মিশেছিলেন। ১৯৮৬ সালে যার দুর্দান্ত নৈপূণ্যে বিস্মিত হয়েছিল সারাবিশ্ব। সেবারই বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মত টেলিভিশনে আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখে। সেবারই নজর কাড়েন ম্যারাডোনা। আর প্রথম প্রেমই যে শ্বাশ্বত এটা কে না জানে!
শুভ জন্মদিন দিয়াগো!!