পিটার ড্রুরির অন্য রকম জয়

পেনাল্টি পর্বের শেষ কিক। নেবেন গনজালো মনটিয়েল। ধীর পায়ে হেঁটে আসছেন। সারা বিশ্বের নজর চার নম্বর ওই জার্সির দিকে। তাঁর কিকের ওপরই লেখা হয়তো হয়ে যাবে ইতিহাস। লম্বা একটা শ্বাস নিলেন মনটিয়েল। ডান পায়ের জোরালো শটে বলটা জড়িয়ে গেল জালে। মেসি জিতলেন বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা জিতলো বিশ্বকাপ। পুরো ছবিটা এত সুন্দর হতো না যদি পিটার ড্রুরি তাঁর অসাধারণ ঢঙে দৃশ্যের বিবরণটা না দিতেন।

আর্জেন্টিনার জয়ে ধারাভাষ্যে থাকা ড্রুরি বললেন, ‘আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়নস অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এগেইন, অ্যাট লাস্ট। অ্যান্ড দ্য নেশন উইল ট্যাংগো অল নাইট লং। ‘
মেসি বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন পিটার ড্রুরি যেন কবিতা পড়ছেন, ‘হি হ্যাস অলওয়েজ বিন দ্য পয়েন্ট অব ডিফারেন্স। আনপ্যারালালড।’ ড্রুরি বলছেন, ‘মেসি শেকিং হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস।’

ফুটবলের কবি পিটার ড্রুরি চলতি বছর ফুটবল সাপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (এফএসএ) এর চোখে সেরা ধারাভাষ্যকার নির্বাচিত হয়েছেন। টানা চারবারের মত ওই সম্মানে ভূষিত হলেন পিটার ড্রুরি। সম্মানিত হয়ে ড্রুরি ফুটবলভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
বলা হচ্ছে, ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে যে মহাকাব্যিক ম্যাচটি হয়েছে তাঁর বিবরণ পিটার ড্রুরির চেয়ে ভালো কেউ দিতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। টানটান উত্তেজনা ও মেসি-এমবাপ্পের লড়াইটা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।

ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া পিটার ড্রুরি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের পাঁড়ভক্ত। বিবিসির খেলা বিভাগে কাজ করে মাতিয়েছেন ফুটবল বিশ্ব। ইংরেজি ভাষায় ফুটবল নিয়ে তাঁর ধারাভাষ্যে মুগ্ধ সবাই। প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ধারাভাষ্যে তাঁর কাছাকাছি অবশ্য কেউ নেই এখন। তবে লিওনেল মেসির কট্টর ভক্ত ড্রুরি যেন মেসির বেলায় নিজের আবেগকেও সংযত করতে ভুলে যান। ২০২২ বিশ্বকাপের পর এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তিনি কেঁদে দিয়েছিলেন।

পিটার ড্রুরির বাবা ছিলেন যাজক। কথা ও শব্দ দিয়ে সম্মোহন করার শক্তিটা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন তিনি। দ্য অ্যাথলেটিক কে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘শব্দ আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আবার মাঝে মাঝে শত্রুও বটে।’

২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার শাবালালার গোলের পর ,‘বাফানা বাফানা’ বলে আবেগ নিয়ে ড্রুরির চিৎকারটা আজও কানে ভাসে। ২০১২ তে শেষ মিনিটে অ্যাগুয়েরো গোলে শিরোপার স্বাদ নেয় ম্যানসিটি। ‘অ্যাগুয়েরো ওওওওও ‘ বলে সেই কণ্ঠ আজও সতেজ।

ফুটবলের চিত্রটা পিটার ড্রুরির কবিতায় যেন অন্যরূপ পায়। ড্রুরির শব্দের ব্যবহারে মুগ্ধতা আসে তবে তা চলে যায় না। থেকে যায়। নতুন কিছু শেখার আনন্দ দেয়। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর ড্রুরি বলেন, ‘দ্য নেশন উইল ট্যাংগো অল নাইট লং..।’ ট্যাংগো যে দক্ষিণ আমেরিকার এক ধরণের নাচ এটা জানাই ছিল না। কবি বলেই তো উপমা ব্যবহার করবেন, তাই না?

Exit mobile version