চাপ, সমালোচনা আর প্রত্যাবর্তন
রিয়াল মাদ্রিদের সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। গত মৌসুমে লা লিগা কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রত্যাশিত ফল না আসায় বরখাস্ত করা হয়েছিল সাবেক রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে। আনচেলত্তি বিদায়ের পর রিয়াল মাদ্রিদে জাবি আলোনসো দায়িত্ব পান ।

জাবি আলোনসোর সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের সম্পর্ক নতুন নয়। দীর্ঘদিন তিনি রিয়ালের হয়ে খেলেছেন। খেলতেন মূলত মিডফিল্ডার হিসেবে। তার সময়কার ফুটবলারদের মধ্যে তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার বলা হয়। জাবি তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রিয়াল সোসিয়াডাদে। ২০০২–২০০৩ মৌসুমে তাকে সোসিয়াডাদের অধিনায়ক করা হয়। সেবার দলটি লা লিগা শেষ করে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে।
এরপর ২০০৪ সালে তিনি পাড়ি জমান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। তৎকালীন ১০.৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে লিভারপুল তাকে দলে ভেড়ায়। সেবছরই লিভারপুল জেতে চ্যাম্পিয়নস লিগ। দীর্ঘ সময় লিভারপুলে কাটিয়ে ২০০৯ সালে তিনি ফেরেন লা লিগায়, সেটাও রিয়াল মাদ্রিদে। রিয়ালে তিনি কাটান এক স্বর্ণালী অধ্যায়। ক্লাবের হয়ে জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, কোপা ডেল রে সহ একাধিক শিরোপা।

রিয়াল অধ্যায় শেষ করে তিনি যান বুন্দেসলিগায়। ২০১৫ সালে যোগ দেন বায়ার্ন মিউনিখে। তিন বছর খেলেই জেতেন তিনটি বুন্দেসলিগা শিরোপা। ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলের জার্সিতেও ছিল তার ঈর্ষণীয় সাফল্য। ২০০৩ সালে স্পেন জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। স্পেনের হয়ে জেতেন ২০১০ বিশ্বকাপ, ইউরো ২০০৮ এবং ইউরো ২০১২। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন তিনি।
জাবি আলোনসোর এলিট ক্যারিয়ার
খেলোয়াড়ী জীবনে এর চেয়ে এলিট ক্যারিয়ার আর কী হতে পারে? জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ এবং দুটি ইউরো জিতেছেন। ক্লাব পর্যায়ে খেলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী ক্লাবগুলোতে। নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারে জাবি ছিলেন সেরাদের সেরা।
লিজেন্ডারি খেলোয়াড়ী জীবন শেষে জাবির কোচিং ক্যারিয়ার শুরু রিয়াল মাদ্রিদ অনূর্ধ্ব–১৪ দলে। এরপর যান নিজের সাবেক ক্লাব রিয়াল সোসিয়াডাদের ‘বি’ দলের দায়িত্ব নিতে। ২০১৯ সালে দায়িত্ব নিয়ে সোসিয়াডাদ ‘বি’ দলকেও নিয়ে যান শীর্ষে।
কিন্তু কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায়টি শুরু হয় ২০২২ সালে, যখন তিনি যোগ দেন লেভারকুসেনে। জাবি কোচ হওয়ার পর লেভারকুসেন ২০২৩–২০২৪ মৌসুমে পুরো সিজন অপরাজিত থেকে বুন্দেসলিগা জেতে। লেভারকুসেনের এই সাফল্য ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে এক মহাকাব্যের মতো। মাঝারি সারির একটি দলকে নিয়ে বায়ার্ন–ডর্টমুন্ডের মতো ক্লাবের সামনে অপরাজিত থেকে শিরোপা জয় সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ৩০ বছর পর এটিই ছিল লেভারকুসেনের প্রথম বুন্দেসলিগা শিরোপা।

লেভারকুসেনের তরুণদের বড় স্টার বানিয়েছিলেন জাবি। বিভিন্ন লিগ থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় এনে সুপারস্টার·বিহীন দলে তৈরি করেছিলেন বিশ্বমঞ্চ কাঁপানো এক স্কোয়াড।
এল ক্লাসিকো জয়ের পর আট ম্যাচে মাত্র দুই জয়
২০২৪–২০২৫ মৌসুমেও লেভারকুসেন পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় হয়ে মৌসুম শেষ করে। এরপর শুরু হয় রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকার কোচ হিসেবে হোমকামিং। ২০২৫ সালের জুনে তিনি কোচ হিসেবে যোগ দেন রিয়ালে। যোগ দিয়েই দারুণ শুরু করেন জাবি। প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সাকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থায় ছিল দল।
কিন্তু সমস্যার শুরু এল ক্লাসিকোর পর। এল ক্লাসিকোর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা মিলিয়ে শেষ ৮ ম্যাচে রিয়াল জিতেছে মাত্র ২ টিতে। লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে রিয়াল এখন দ্বিতীয়। ১৬ ম্যাচে পয়েন্ট ৩৬। সমান ম্যাচ খেলে বার্সার পয়েন্ট ৪০। গতকাল ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হারের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল নেমে গেছে গ্রুপ টেবিলের ৭ নম্বরে। ৬ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১২।
তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে জাবি পাননি পূর্ণশক্তির স্কোয়াড। মিলিটাও, কার্ভাহাল, ট্রেন্ট, আলাবা, মেন্ডি, কামাভিঙ্গা ও হুইসেন সবাই ইনজুরির কারণে বাইরে।
শেষ দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় শুরু হয়েছে সমালোচনা। অনেকেই বলছে, জাবি নাকি চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। কিন্তু এত বর্ণালী ফুটবল জীবনের পর, কোচিংয়ে এসে এত কম সময়ে এমন বিশাল সাফল্যের পরও কি মাত্র দুই মাসের ব্যর্থতার জন্য তাকে সরানো যায়? যখন তিনি পাচ্ছেনও না পূর্ণশক্তির দল?
খেলোয়াড় জাবি বা কোচ জাবি যখনই ব্যাকফুটে গেছেন, তখনই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ক্যারিয়ারে তাকে নিয়ে যখনই সংশয় তৈরি হয়েছে, মাঠেই দিয়েছেন জবাব। তাই এই সময়ের সমালোচনা বা প্রশ্নের উত্তরটাও হয়তো তিনি মাঠেই দেবেন। ইউসিএল ও লা লিগা দুটো জায়গাতেই এখনো রয়েছে কামব্যাকের সুযোগ। মৌসুমও অনেক বাকি। আর রিয়াল তো কামব্যাকের জন্যই পরিচিত। সাবেক মাদ্রিদিস্তা জাবিও তো রিয়ালেরই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার। তাই কামব্যাকটা তার রক্তেই আছে।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩




















