দ্রুততম সেঞ্চুরি করে চমক দেখিয়েছেন ট্রাভিস হেড
অ্যাশেজ সিরিজের শুরুটা তেমন জমল না! বোলারদের দাপটে দুই দলের ব্যাটাররা রীতিমতো নাজেহাল হয়েছেন। প্রথম দিনেই পতন ঘটে ১৯ উইকেটের। প্রথম ইনিংসে ১৭২ রান করা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৪ করতে পেরেছে। এতে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট হয় ২০৫! আর তখনই দ্রুততম সেঞ্চুরি করে চমক দেখিয়েছেন ট্রাভিস হেড। বোলারদের দৌরাত্ম্য যেখানে সেই মঞ্চেই মাত্র ৮৩ বলে ১৬ চার, ৪ ছক্কায় ১২৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্য ছুঁয়েছে অজিরা। তাই মাত্র দুই দিনেই শেষ হয়েছে পার্থ টেস্ট। ৮ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। সবমিলিয়ে ১৪১.১ ওভার খেলা হয়েছে। সেই হিসেবে এই টেস্ট দু’দিনও হয়নি! অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পার্থ টেস্ট এটাই ঘটল!

কি ভেবে যে ইংল্যান্ড টস জেতার পর আগে ব্যাটিং নিয়েছিল সেটা নিয়েই হয়তো আক্ষেপে পুড়ছে তারা। কারণ অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের আগুন বোলিংয়ে মাত্র ১৭২ রানে প্রথম ইনিংস থেমেছে তাদের। হ্যারি ব্রুক ৫২, ওলি পোপ ৪৬ আর জেমি স্মিথ ৩৩ রান করেন। স্টার্ক ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে মাত্র ৭৮ রানে ৭ উইকেট নেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে। এসবেই প্রথম দিনের ঘটনা। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া ১৩২ রানে গুটিয়ে যায়। অ্যালেক্স ক্যারি ২৬ ও ক্যামেরন গ্রিন ২৪ রান করেন। বেন স্টোকস ২৩ রানে ৫টি এবং ব্রাইডন কার্স ৩টি উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ৪০ রানের লিড নিয়ে ইংলিশরা দ্বিতীয় ইনিংসে ভারমুক্ত হয়েই নেমেছিল। কিন্তু তারা এবারও সুবিধা করতে পারেননি স্বাগতিক পেসারদের দাপটে। অবশ্য প্রথম ওভারেই জ্যাক ক্রলি ০ রানে সাজঘরে ফেরার পর বেন ডাকেট ও ওলি পোপ ৬৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। তারপর বাকি ৯৯ রান তুলতে পরের ৯ উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে ১৬৪ রানে। আটে নেমে গাস অ্যাটকিনসন ৩২ বলে ২ চার, ২ ছয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন। পোপ করেন ৩৩। স্টার্ক ৩টি, স্কট বোল্যান্ড ৪টি ও অভিষিক্ত ব্রেন্ডন ডগেট ৩টি উইকেট নেন।
এই টেস্ট ইংল্যান্ড দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪০৫ বল মোকাবেলা করেছে। ৩২.৫ ওভার হয়েছে প্রথম ইনিংসে এবং ৩৪.৪ ওভার হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসে। বলের হিসেবে এটি তাদের তৃতীয় সর্বনিম্ন। ১৯০৪ সালে মেলবোর্নে ৩২৫ বল ও ১৮৮৮ সালে লর্ডসে ৩৮৮ বল খেলেছিল তারা।
৪৯ হাজার ৯৮৩ দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন পার্থে। তারা ম্যাচের এই পরিস্থিতি দেখে হতাশায় ভুগেছেন। তবে তাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আনন্দ উপহার দিয়েছেন ট্রাভিস হেড। তিনি সাধারণত টেস্টে ওপেনিং করেন না। কিন্তু পিঠের সমস্যায় ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস চলাকালীন উসমান খাজা কয়েকবার ফিল্ডিং না করে মাঠের বাইরে গিয়েছেন। তাই ওপেনিংও করতে পারেননি। এতে অস্ট্রেলিয়ার লাভই হয়েছে। এদিন ট্রাভিস হেড শুরুতে নেমে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন।

২০৫ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়ার। হেড ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি করেন মাত্র ৬৯ বলে। তার এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে যেই মাঠে বোলাররা আধিপত্য দেখিয়েছেন সেখানেই ইংলিশ পেসারদের ছন্নছাড়ার মতো দেখা গেছে। উদ্বোধনী জুটিতে জেক উইদেরাল্ডের সঙ্গে ৭৫ রান যোগ করেন তিনি ১১.৩ ওভারে। উইদেরাল্ড ৩৪ বলে ৩ চারে ২৩ রানে বিদায় নেন। এরপর মারনাস লাবুশেনও এসে হেডের গতির সঙ্গে গা ভাসিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৭ রানের জুটি হয়েছে মাত্র ৯২ বলে।
দলকে জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে রেখে আউট হন হেড। তিনি ৮৩ বলে ১৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৩ রান করেন। লাবুশেন অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৬ চার, ১ ছয়ে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। ২৮.২ ওভারেই ২ উইকেটে ২০৫ রান তুলে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। দুটি উইকেটই নেন ব্রাইডন কার্স।
ফলে ১০৪ বছর পর অ্যাশেজ সিরিজের কোনো টেস্ট মাত্র ২ দিনের মধ্যেই শেষ হয়েছে। ১৯২১ সালে ট্রেন্টব্রিজে সর্বশেষ এরকম হয়েছে। সবমিলিয়ে অবশ্য ৬ বার অ্যাশেজের কোনো টেস্ট ২ দিনে সমাপ্ত হল এবার নিয়ে। পার্থ টেস্টে মাত্র ৮৪৭ বল খেলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ টেস্টে এটাই সবচেয়ে কম বলের ম্যাচ। বলের হিসেবে অ্যাশেজ ইতিহাসেই এটি তৃতীয় সর্বনিম্ন। ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৭৮৮ ও লর্ডসে ৭৯২ বল খেলা হয়েছিল।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে যৌথভাবে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন হেড। ৬৯ বল থেকেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০১২ সালে পার্থের আরেকটি মাঠ ওয়াকাতে ভারতের বিপক্ষে সমান বল খেলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে রান তাড়ার ক্ষেত্রে টেস্টে হেডের এই সেঞ্চুরি দ্রুততম। ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের গিলবার্ট জেসপ ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পার্থ টেস্ট এই রেকর্ড দেখিয়েছে ইতিহাস!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস- ১৭২/১০; ৩২.৫ ওভার (ব্রুক ৫২, পোপ ৪৬; স্টার্ক ৭/৫৮) ও
দ্বিতীয় ইনিংস- ১৬৪/১০; ৩৪.৪ ওভার (অ্যাটকিনসন ৩৭, পোপ ৩৩; বোল্যান্ড ৪/৩৩, ডগেট ৩/৫১, স্টার্ক ৩/৫৫)।
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস- ১৩২/১০; ৪৫.২ ওভার (ক্যারি ২৬, গ্রিন ২৪; স্টোকস৫/২৩, কার্স ৩/৪৫) ও
দ্বিতীয় ইনিংস- ২০৫/২; ২৮.২ ওভার (হেড ১২৩, লাবুশেন ৫১*; কার্স ২/৪৪)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩





















