ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। ভারতের বিপক্ষে কোনোভাবেই যেন জিততে পারছিল না বাংলাদেশ। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত জয় আবার এসেছে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামেই। ম্যাচের ১১ মিনিটে মোরসালিনের করা গোলে (১-০) আজ ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। প্রতি মুহুর্তেই দর্শক, ভক্ত-সমর্থকরা দুরু দুরু মনে আশঙ্কা করেছেন ‘এই বুঝি বাংলাদেশ গোল হজম করল!’ সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচেই এমন হয়েছে। বাংলাদেশ দল শেষ মুহুর্তে গোল হজম করে জয় হাতছাড়া করেছে। এদিন অবশ্য তা হয়নি, পুরো সময় লিড ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। তাই ২৪ হাজার দর্শক উল্লাসে ভেসে মাঠ ছেড়েছেন বাংলাদেশের ১-০ গোলে জয় দেখে।
চলমান এশিয়া কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের একমাত্র জয় এটি। ৫ ম্যাচের ২টি ড্র ও ২টি হার দেখার পর এই জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৫। সমান ম্যাচে ভারত ২ ড্র, ৩ হারে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপে সবার নিচে। অবশ্য আগেই উভয় দলেরই মূল পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

২০০৩ সাল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেটিও ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় দুই যুগ আগের সেই সাফল্যের স্মৃতি আবার ফিরিয়ে এনেছেন হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া ও মোরসালিনরা। এই সময়ের মধ্যে দুই দলের র্যাঙ্কিংয়েও বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৪৭ ধাপ এগিয়ে ভারত। এর আগে ২৯ বারের মোকাবেলায় মাত্র ৩ বার ভারতকে হারাতে পারলেও তাদের কাছে হেরেছে ১৩ বার। বাকি ১৩ বার হয়েছে ড্র। তাদের বিপক্ষেই এবার জিতল লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
উত্তেজনার পারদ
ম্যাচ শুরুর আগেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের আশেপাশে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দর্শকরা ঢুকতে পারেননি। কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল এই ম্যাচ নিয়ে দারুন উন্মাদনা। দর্শকরা মাঠে স্লোগান দিয়েছেন,‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘আল্লাহু আকবর’। সেই উত্তেজনা উল্লাসে রূপ নিয়েছে একেবারে শুরুতেই।

১১ মিনিটের সময় কাউন্টার অ্যাটাকে ভারতীয় প্রান্তে হানা দেয় বাংলাদেশ। রাকিবকে বল বাড়িয়ে দিয়ে নিজে এগিয়ে যান তরুণ ফরোয়ার্ড মোরসালিন। রাকিব একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের ভেতর বল বাড়ান অগ্রগামী মোরসালিনকে। সেই বল পেয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে গোল করেন মোরসালিন (১-০)। ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং পোস্ট ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিলেন তাকে বাঁধা দিতে। কিন্তু মোরসালিন জালে বল পাঠিয়েছেন গুরপ্রিতের দু’পায়ের ফাঁক গলে। বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতে পুরো স্টেডিয়াম।
বাংলাদেশের মূল লড়াই
এরপরই মূলত বাংলাদেশের মূল লড়াই শুরু হয়েছে। সেই লড়াই হচ্ছে লিড ধরে রাখার। এগিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য উজ্জীবিত হয়েই খেলেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু ৩১ মিনিটে মিতুল মারমার ভুলে নিশ্চিত একটি গোল পেয়েই যাচ্ছিল ভারত। ভুল পাসে ভারতীয় ফুটবলার বল পেয়ে যান। তার শট মিতুল ঠিকমত ক্লিয়ার করতে পারেননি। ভারতের চাংতে গোলপোস্ট একেবারে অরক্ষিত পান। তার নেওয়া শট বাংলাদেশের পোস্টের দিকে এগিয়ে যায়। কয়েক গজ দূর থেকে হামজা চৌধুরী লাফিয়ে হেড করে নিশ্চিত গোল সেভ করেন। ফলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
শারীরিকভাবে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকায় ডিফেন্ডার তারিক কাজীকে তুলে নেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তখন ম্যাচের মাত্র ২৮ মিনিট পেরিয়েছে। বদলি হিসেবে নামেন শাকিল আহাদ তপু।

গ্যালারির পাশাপাশি উত্তেজনার রেশ ছিল দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও। ৩৫ মিনিটের সময় বল দখলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার তপু বর্মন ও ভারতের মিডফিল্ডার বিক্রম সিংয়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এতে অন্য ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ফিলিপাইনের রেফারি দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখান।
গোল পরিশোধে মরিয়া ভারত কয়েকটি কর্নারও লাভ করে। তবে সেখান থেকে তারা সাফল্য পায়নি। ৪৪ মিনিটে বাংলাদেশের আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া হয়। বক্সের সামনে থেকে হামজা খুব দ্রুত বাঁ পায়ে জোরালো শট নেন। যা অল্পের জন্য পোস্টের পাশ দিয়ে যায়। প্রথমার্ধে ১-০ লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
উত্তেজনা ছিল
দ্বিতীয়ার্ধেও উত্তেজনা ছিল দুই দলের মধ্যে। বিশেষ করে পিছিয়ে থাকার কারণে ভারতীয় দল ছিল মরিয়া। যদিও তারা খুব ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু মোরসালিনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। তার গায়েও হাত দেন। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে হামজা ও রেফারি এসে সবাইকে শান্ত করেন।

প্রথমার্ধের তুলনায় ভারত কিছুটা গোছানো ফুটবল খেলেছে। তাই কিছু ছোটোখাটো সুযোগও তৈরি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল লিড ধরে রাখা। তাই সেভাবেই খেলা চালিয়ে গেছেন তারা। ৭১ মিনিটে মোরসালিন ও জায়ানকে তুলে নিয়ে বদলি হিসেবে তাজ উদ্দিন ও শাহরিয়ার ইমনকে নামিয়েছেন ক্যাবরেরা।
৭০ মিনিটের পর থেকে বাংলাদেশের অর্ধেই বল ছিল বেশি। কিন্তু এদিন আর বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভুল করেনি। ভারতের প্রতিটি আক্রমণ দক্ষতার সাথেই ক্লিয়ার করেছেন তপু বর্মন, সাদ উদ্দিন ও তারিক কাজীরা। নির্ধারিত সময়ের পর ৬ মিনিট বর্ধিত করা হয়। তখনই মূলত ভয়ে ছিলেন স্বাগতিক দর্শকরা। কারণ সম্প্রতি হংক ও নেপালের বিপক্ষে এই বর্ধিত সময়েই শেষ মুহুর্তের গোলে জয় হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ দল।

কিন্তু এদিন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন জামাল-হামজারা। ভারতের কোচ খালিদ জামিল দ্বিতীয়ার্ধে অনেক কৌশল বদলেছেন ও কয়েকজন খেলোয়াড়ও পরিবর্তন করেছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি। বাংলাদেশ জিতেছে ১-০ গোলে। আর হামজা-মোরসালিনরা মেতেছেন উৎসবে।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩

















