২০ বছর আগে টেস্ট অভিষেক হয়েছে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তারপর ২০ বছর খেলেছেন বাংলাদেশের জার্সিতে মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটে। অবশেষে বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেছেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ইতিহাসের মাত্র ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে করেছেন শততম টেস্টে সেঞ্চুরিও। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে মুশফিক দাবি করলেন, তিনি নিজেও একশ’ টেস্ট খেলার কথা ভাবেননি। এর পেছনে স্ত্রীর আত্মত্যাগও রয়েছে বলে জানান তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৯ বছরের ইতিহাসে মাত্র ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে একশ’ টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেছেন মুশফিকু রহিম। এমন একটি অবিস্মরণীয় ম্যাচে নামার আগে সর্বস্তর থেকেই নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন। নিজের প্রতিক্রিয়ার আজ সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেছেন,‘আলহামদুলিল্লাহ! এটা তো আমি নিজেও আসলে বিশ্বাস করতে পারি না… বিশেষ করে একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার ১০০ টেস্ট খেলবে। তো এটা সত্যিই অনেক বড় অর্জন।’

আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি পুরনো টেস্ট। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড খেলছে ২৬০৭ নম্বর ম্যাচ। সেখানে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে একশ’ টেস্ট খেলাটা সত্যিই অবাক করার মতোই। সেজন্যই মুশফিক বলেছেন,‘শুধু আমার হয়েছে জন্য বলছি না। যেকোনো দেশের, যে কারও জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত। অবশ্যই ভালো লাগছে যে সেই ব্যক্তিটা আমি হতে পেরেছি।’
এখন বয়স ৩৮। অন্য দুই ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন মুশফিক। এখন টেস্টে এতো বড় অর্জনের পর তিনি মনে করেন দায়িত্বটা আরও বেড়েছে। তরুনদের তৈরি করে রেখে যেতে চান মুশফিক। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেছেন,‘আমার ওপর দায়িত্বটা এখন অন্যরকম বেশি। সেটা চেষ্টা করব। আর যে কয়টা ম্যাচই হয়তো যেভাবেই খেলতে পারি, ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে যেন সেটার প্রতিফলন দিতে পারি। আর এর সঙ্গে যেন আমি (অবসরে) যাওয়ার পরেও ড্রেসিং রুমে যেন এক-দুইজন ক্রিকেটার দিয়ে রেখে যেতে পারি, যাতে সেই শুন্যস্থানটা যেন পূরণ হয়ে যায়।’
মুশফিক ক্যারিয়ারজুড়েই কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতার জন্য আলোচিত। তিনি বলেছেন,‘আমার হাতে আছে চেষ্টা, পরিশ্রম আর সততা। এগুলো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ফলটা কি হবে তা তো জানার উপায় নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনেও আমি ওই বিষয়গুলোতে ছাড় দেই না। যতদিন আমার ক্যারিয়ার আছে এভাবেই আমি চালিয়ে যাব।’

মুশফিকুর রহিম অবশ্য নিজেই যে এতোকিছু করতে পারছেন দীর্ঘ সময় ধরে তা নয়। অনুপ্রেরণা, উৎসাহ এবং সমর্থনেরও প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে মুশফিক জানিয়েছেন, কে তার জন্য সবচেয়ে বড় আত্মোৎসর্গ করেছে। তিনি বলেন,‘আমি আসলেই একজন (বোরিং) একঘেঁয়ে মানুষ। আমি প্রতিদিন একই রুটিনে অনুশীলন করি। শুধু সততা আছে আমার হাতে। আমার জন্য সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগ করেছে আমার স্ত্রী। আমি অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। ঘরে ওমন পরিবেশ না থাকলে কোনো দিন হতো না।’
মুশফিকের দাবি, ঘরে ‘শান্তি’ না থাকলে এভাবে নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি বলেও জানিয়েছেন মুশফিক। তিনি বলেন,‘নিজেকে নিয়ে আমি খুশি। দেশের জার্সিতে প্রত্যেকটি টেস্ট ছিল আমার জন্য গর্বের। আমার দুটো বাচ্চা আছে। স্বাভাবিকভাবে ছোট বাচ্চারা সারারাত ঘুমায় না। কিন্তু আমার কখনও নির্ঘুম রাত কাটেনি। কারণ সে পুরোটা সময় রাত জেগে বাচ্চাদের মানুষ করেছে। আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছে। তাই আমি সবসময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩

















