শেষ মুহুর্তে গোল হজম করা যেন চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে হংকংয়ের বিপক্ষেও সর্বশেষ ম্যাচে গোল হজম করে হেরে যায় বাংলাদেশ। এবার নেপালের বিপক্ষে একই মাঠে ইনজুরি টাইমে হজম করা গোলে (২-২) ড্র করেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হামজা চৌধুরীর জোড়া গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু অনন্ত তামাং ৯৪ মিনিটে গোল করে সমতা আনেন।
প্রথমার্ধে চরম ভুল করেছিলেন ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন ও সোহেল রানা। এর খেসারত দিতে হয় ম্যাচের ৩২ মিনিটে গোল হজম করে। তাই স্তব্ধ হয়ে যায় ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম। তবে দর্শকদের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জাগিয়ে তোলেন হামজা চৌধুরী। ৪৬ মিনিটে চোখ ধাঁধানো বাই-সাইকেল কিকে গোল করে সমতা আনার ৪ মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। সুকৌশলে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন হামজা। তার সেই জোড়া গোলের পরও প্রীতি ফুটবল ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ।

আগামী ১৮ নভেম্বর ঢাকায় এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ফুটবল দল। তার আগে নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগটা নেপালের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এদিন শুরুর একাদশেই প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা রেখেছেন অভিজ্ঞ জামাল ভূঁইয়াকে। তবে ভ্রমণ ক্লান্তির কারণে শুরুতে বেঞ্চে বসতে হয়েছে শমিত শোমকে।
এমন একটি ম্যাচে প্রথমার্ধে ডিফেন্সের ভুলে বাংলাদেশ গোল হজম করে। দীর্ঘদিন ধরেই নানা ম্যাচে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের দুর্দশা দলকে ভুগিয়েছে। অনেকবারই বাজে ডিফেন্স দলের জন্য পরাজয় ডেকে এনেছে। এবার ম্যাচের ৩২ মিনিটে সে কারণেই নেপাল গোল করে এগিয়ে যায়। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণে উঠে আসা নেপালের ফরোয়ার্ডকে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় সাদ উদ্দিন ঠিক মতো মার্কিং করতে পারেননি। এমনকি ওই আক্রমণের মাঝে একটি কাটব্যাক ক্লিয়ার করতে পারেননি সোহেল রানা। ফলে খানিকটা দৌড়ে এসে রোহিত চাঁদের নেওয়া জোরালো শট বাংলাদেশের ডিফেন্স ও গোলরক্ষককে পরাস্ত করেছে (১-০)। ম্যাচের শুরু থেকে এদিনও অনেক দৃষ্টিকটু ভুল করেছে বাংলাদেশের ডিফেন্স। এই ভুলের অধিকাংশই সাদের!
হংকংয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দারুন খেলার পর ঘরের মাটিতে নেপালের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে প্রায় ২ সপ্তাহ অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মাঠে নামার পর হতাশাব্যঞ্জক পারফর্ম্যান্স দেখা গেছে বাংলাদেশের ফুটবলারদের। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও পরিকল্পিত ও গোছালো কোনো আক্রমণে নেপালকে শঙ্কিত করতে পারেনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। সুসংবদ্ধ কোনো ক্যারিশমা উপহার দিতে পারেননি তারা। এরপরও গোলের সুযোগ এসেছিল ২৬ মিনিটের সময়। কিন্তু ফরোয়ার্ড রাকিব ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ফিনিশিং দক্ষতার ঘাটতিতে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। এটা আরেকটি বড় সমস্যা বাংলাদেশ দলের।
প্রথমার্ধে দুই প্রান্ত থেকে কর্নার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরী মাঠ জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এবং যথারীতি নজরকাড়া পারফর্ম করেছেন। তবে অন্যদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে হতাশা নিয়েই প্রথমার্ধ সমাপ্ত হয় হামজাদের।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই বাংলাদেশের তাঁবু থেকে হতাশার মেঘ কেটে গেছে। সমতাসূচক গোলে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী দর্শক-ভক্তদের উল্লাসে ভাসিয়েছেন হামজা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সোহেল রানার পরিবর্তে শমিত শোমকে নামিয়ে ধার বাড়িয়েছিলেন কোচ ক্যাবরেরা। ৪৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন ফাহিম। নেপালের ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলেও অধিনায়ক জামালের পায়ে পড়ে। তিনি বলটি হালকা উঠিয়ে হামজার উদ্দেশ্যে পাঠান। হামজা বক্সের মধ্যে শূন্য লাফিয়ে শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন (১-১)।

৪ মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর রাকিবকে ফাউল করেন সুমন শ্রেষ্ঠা। ফলে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। নেপালের খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ জানালেও সিদ্ধান্তে অটল থাকেন রেফারি। দারুন এক পেনাল্টিতে বল জালে জড়িয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন (২-১) হামজা। এরপর ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণেই ছিল বাংলাদেশ। বলের দখলও ছিল হামজাদের।
ম্যাচের ৮০ মিনিটে জোড়া গোল করা হামজাকে তুলে নেন কোচ ক্যাবরেরা। তিনি কিছুটা আঘাত পাওয়াতেই মাঠ ছাড়তে হয়। তখন থেকেই যেন মাঠের গতি-প্রকৃতি পাল্টে যেতে থাকে। নেপালের আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। ক্রসবারে লেগে একটি বলও ফেরত আসে তাদের। কিন্তু এমন সংঘবদ্ধ আক্রমণের সুফল পেয়েছে তারা একেবারে শেষ মুহুর্তে। সবাই যখন নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন বাংলাদেশের জয়, ওই সময়ই অনন্ত তামাং গোল করেছেন।
নির্ধারিত ৯০ মিনিচ শেষে যোগ করা হয় আরও ৫ মিনিট। ৯৪ মিনিটের মাথায় গোল পায় নেপাল। ডিফেন্সে জটলা পাকিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এবং গোলরক্ষক মিতুল মারমা ভুল করেছেন। কর্নার থেকে পাওয়া বলে ফ্লিক করে গোল করেন অনন্ত (২-২)। আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক ম্যাচ শেষ করে বাংলাদেশ।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩

















