সুপার ওভারে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্ট

সুপার ওভারে জয়ের পর উল্লাস বাংলাদেশ ‘এ’ দলের

নির্ধারিত ওভারেই জিততে পারতো বাংলাদেশ ‘এ’ দল। তবে বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানের বলে ১৫ রান হয়েছে ক্যাচ মিস ও উইকেটরক্ষক, অধিনায়ক আকবর আলীর ভুলে। তাই সুপার ওভারে গড়িয়েছে ম্যাচ। অবশ্য কাতারের দোহায় অনেক নাটকীয়তার পর সুপার ওভারে ভারত ‘এ’ দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস আসরের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ২০১৯ সালের পর আবার এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস আসরের ফাইনালে পা রাখে তারা।

বাংলাদেশ ‘এ’ আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে তোলে ১৯৪ রান। এরপর জবাব দিতে নেমে ভারত ‘এ’ দলের জেতার জন্য শেষ ওভারে দরকার পড়ে ১৬ রান। বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল আসেন বোলিংয়ে। ১ম দুই বলে ১টি করে রান দিলেও তৃতীয় বলে ছক্কা হজম করেন তিনি। আর চতুর্থ বলে জিশান আলম সহজ ক্যাচ মিস করেন এবং বলটি চার হয়ে যায়। পঞ্চম বলে আশুতোষ শর্মাকে বোল্ড করে দেন রাকিবুল। শেষ বলে ৪ রানের দরকার ছিল ভারতের। ওই বলটি ফিল্ডারের কাছে সরাসরি যাওয়ার পরও দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। কিন্তু উইকেটরক্ষক আকবর রান আউট করতে গিয়ে পারেননি। উল্টো আরেকটি রান নিয়ে ম্যাচ ‘টাই’ করে ফেলে ভারত ‘এ’ দল। তাই নিজেদের ভুলের খেসারত হিসেবে সুপার ওভারের উত্তেজনায় যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

ম্যাচের ১৯তম ওভার ও সুপার ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন রিপন মণ্ডল

ডানহাতি পেসার রিপন মণ্ডল ভারতীয় অধিনায়ক জিতেশ শর্মাকে সুপার ওভারের প্রথম বলেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন। পরের বলটিও ইয়র্কার লেংন্থের ছিল। আশুতোষ শর্মা তুলে মারতে গিয়ে জাওয়াদ আবরারের ক্যাচে পরিণত হলে শুন্য রানেই সুপার ওভার শেষ হয়ে যায় ভারত ‘এ’ দলের। জেতার জন্য মাত্র ১ রানের প্রয়োজন। ওই সময় ইয়াসির আলী চৌধুরী লেগস্পিনার সুইয়াশ শর্মাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে আবার নাটকীয়তা শুরু হয়। অধিনায়ক আকবর নামেন ব্যাটিংয়ে। পরের বলে অবশ্য ‘ওয়াইড’ হওয়াতে জিতে যায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রত্যাশিত উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার হাবিবুর রহমান সোহান ও জিশান আলম। মাত্র ৪.২ ওভারে ৪৩ রানের জুটি হয়। জিশান ১৪ বলে ২ চার, ২ ছয়ে ২৬ রানে বিদায় নেন। দশম ওভারে জাওয়াদ আবরার ১৯ বলে ১ ছয়ে ১৩ রানে যখন আউট হন তখনও বাংলাদেশের রান ৭৬। জাওয়াদ ধীরগতিতে খেললেও অন্যপ্রান্তে হাবিবুর রহমান সোহান ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন। আকবর আলী ১০ বলে ৯, আগেভাগে নেমে আবু হায়দার রনি ২ বলে ০ সাজঘরে ফেরেন।

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে সতীর্থদের সঙ্গে অধিনায়ক আকবর আলীর শলা-পরামর্শ

অবশ্য হাবিবুর রহমান সোহান করেন হাফ সেঞ্চুরি। তিনি ৪৬ বলে ৩ চার, ৫ ছক্কায় ৬৫ রান করে ১৬তম ওভারে আউট হয়েছেন। আর তখন এসএম মেহেরব হাসান তাণ্ডব শুরু করেন। মাত্র ১৮ বলে ১ চার, ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৪৮ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন তিনি। নামান ধীরের ১৯তম ওভারে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২৮ রান তুলে নেন মেহেরব। শেষ ওভারে বিজয়কুমার বৈশাককে ২ ছক্কা, ২ চার মেরে নেন ২২ রান। তাই শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান পেয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৪ রান করে তারা। গুরজাপনিত সিং ৪ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সুইয়াশ শর্মা ১টি উইকেট নিতে পারলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন।

জবাব দিতে নেমে বৈভব সূর্যবংশীর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩.৪ ওভারেই ৫৩ রান তুলে ফেলে ভারত। কিন্তু আব্দুল গাফফার সাকলাইনের পেসে তিনি ১৫ বলে ২ চার, ৪ ছক্কায় ৩৮ রান করার পর ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। আরেক ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ২৩ বলে ৪ চার, ৩ ছয়ে ৪৪ রান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৪ রানই করতে পেরেছে ভারত ‘এ’ দল। জিতেশ শর্মা ২৩ বলে ১ চার, ২ ছয়ে ৩৩ ও নিহাল ওয়াধেরা ২৯ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। আবু হায়দার রনি ও রাকিবুল হাসান ২টি করে ও রিপন, আব্দুল গাফফার ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচে দারুন বোলিং করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ রিপন মণ্ডল

এর পেছনেও রিপন মণ্ডলের দুর্দান্ত ১৯তম ওভার ভূমিকা রেখেছে। ওই ওভারে তিনি ৬টি বলই ইয়র্কার লেংন্থে ফেলতে পেরেছেন। ফলে একটি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৫ রান দেন তিনি। রাকিবুলের করা শেষ ওভারে জিশান আলম একটি ক্যাচ মিস করেন। শেষ বলে অধিনায়ক আকবর আলী রানআউট করতে গিয়ে মিস করলে ৩ রান নেয় ভারত ‘এ’ দলের ব্যাটাররা। অথচ বলটি ফিল্ডারের হাতেই ছিল। তাই এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস আসরের সেমিফাইনালটি গড়ায় সুপার ওভারে। পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে ভারতকে সুপার ওভারে কোনো রান করতে দেননি রিপন মণ্ডল। তবে প্রয়োজন ১ রানের হলেও ইয়াসির আলী ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে প্রথম বলেই আউট হন। পরের বলটি ওয়াইড হলে জিতে যায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ ইনিংস- ১৯৪/৬; ২০ ওভার (হাবিবুর সোহান ৬৫, মেহেরব ৪৮*, জিশান ২৬; গুরজাপনিত ২/৩৯)।

ভারত ‘এ’ ইনিংস- ১৯৪/৬; ২০ ওভার (প্রিয়াংশ ৪৪, সূর্যবংশী ৩৮, জিতেশ ৩৩, নিহাল ৩২*; রাকিবুল ২/৩৯, আবু হায়দার ২/৪৪)।

ফল: টাই।

সুপার ওভার

ভারত ‘এ’ দল- ০/২; ০.২ ওভার ও বাংলাদেশ ‘এ’ দল- ১/১; ০.১ ওভার।

চূড়ান্ত ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ দল সুপার ওভারে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ:  রিপন মণ্ডল (বাংলাদেশ ‘এ’ দল)

Exit mobile version