বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা মানেই ফলাফল ও জাজিং নিয়ে বিতর্ক। সেই তকমা ঝেড়ে ফেলতে এবারের আয়োজনের শুরুতেই নিরপেক্ষতা ও নির্ভুলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ১৭তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্স, যেখানে অংশ নিচ্ছে দেশসেরা ক্রীড়াবিদরা।
আজ (১৮ আগস্ট) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, “আজ বিকেলেই জাজদের রিফ্রেশার্স কোর্স রয়েছে। জাজদের সঙ্গে আমরাও বৈঠক করব। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে ফলাফল প্রদান করা হবে। এখন ফটোমেশিনও রয়েছে ফলে পক্ষপাত করার সুযোগ সেই অর্থে নেই।”
শুধু ফলাফল নয়, প্রতিযোগিতার শৃঙ্খলাও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অতীতে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে দলগুলোর মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক জানান, “আমরা এবার আগেভাগেই কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে বসেছি যেন এই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।”
জাতীয় স্টেডিয়াম ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব রয়েছে বাফুফে ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের। ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরে মাত্র এক মাস মাঠ ব্যবহারের সুযোগ পায় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। এর মধ্যেও থ্রো ইভেন্টগুলো নিয়ে আপত্তি তোলে বাফুফে। শাহ আলম বলেন, “ডিসকাস থ্রো, শটপুটে মাঠে মাটি হাল্কা নড়চড় হয়। সেটা আমরা ঠিক করে দিতে চাইলেও বাফুফে সামনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের অনুরোধ করেছে মাঠে আয়োজন না করার। তাদের সম্মানার্থে আমরা এবার আর্মি স্টেডিয়ামে করছি।”
এবারের সামার অ্যাথলেটিক্সে থাকছে ৪০টি ইভেন্ট। প্রতিটি ইভেন্টে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যারা রেকর্ড ভাঙবে তারা পাবেন ২০ হাজার টাকা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক দ্রুততম মানব শাহ জালাল মবিন নারী ও পুরুষদের ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম তিনজনের জন্য মোট ৮০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স এবং এবার সামার অ্যাথলেটিক্স আয়োজন করছে ফেডারেশন। এই দুই আসরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। কোনো পৃষ্ঠপোষক না থাকায় আপাতত নিজেদের ফান্ড দিয়েই খেলা চালিয়ে নিচ্ছে ফেডারেশন। শাহ আলম বলেন, “জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের অনুদান ও আমাদের ফান্ড থেকে আপাতত খেলা চালিয়ে নিচ্ছি। সামনে আমরা স্পন্সর নিয়েই করব।”
‘মাদার অব অল ডিসিপ্লিন’ নামে পরিচিত অ্যাথলেটিক্সে দেশের কৃতী ক্রীড়াবিদরা এখন অনেকটাই আড়ালে। তবে তাদের অবদান ভুলে যায়নি ফেডারেশন। এবার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাথলেট ও সংগঠকদের জন্য বিশেষ সম্মাননার আয়োজন করেছে তারা। শাহ আলম বলেন, “আগামীকাল সামার অ্যাথলেটিক্স উদ্বোধনের পর আমরা প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ৪৬ জন অ্যাথলেটিক্স ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করব। এতে তারা যেমন সম্মানিত হবেন তেমনি তরুণরাও অনুপ্রাণিত হবেন।”
ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেও কোনো ফেডারেশন এর আগে এভাবে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মাননা দেয়নি। ফলে এবারের আয়োজন শুধু প্রতিযোগিতামূলক দিক থেকে নয়, বরং ক্রীড়াবিদদের মর্যাদা ও অনুপ্রেরণার দিক থেকেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
সামার অ্যাথলেটিক্সকে ঘিরে প্রত্যাশা অনেক। এবার ফেডারেশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি নিরপেক্ষ বিচার কার্যক্রম ও শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, তবে অ্যাথলেটিক্স নতুন করে দেশে আলোচনায় আসবে বলেই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
