অস্ট্রেলিয়ার রাজত্বে হানা
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ মানেই অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের রাজত্ব—এ যেন ক্রিকেট দুনিয়ার এক অনুচ্চারিত সত্য। কিন্তু ইতিহাস যে কেবল একমুখী নয়, তা প্রমাণ করল ভারতের মেয়েরা। সেমিফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে সাতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে স্বাগতিক ভারত পৌঁছে গেল ফাইনালে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যেন তৈরি হলো এক নতুন মহাকাব্য!
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি। কিন্তু শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। একবার জীবন পেলেও মাত্র ৫ রান করে ক্রান্তি গৌড়ের বলে আউট হন হিলি। অপর ওপেনার ফিবি লিচফিল্ড শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। এলিস পেরিকে সঙ্গে নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তারা। দুই ব্যাটার গড়ে তোলেন দারুণ ১৫৫ রানের জুটি।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ঝোড়ো সেঞ্চুরি করেন লিচফিল্ড। তার বিধ্বংসী ইনিংসে একসময় ভারতীয় বোলারদের চাপে পড়ে যেতে হয়। কিন্তু সেই জুটি ভাঙেন আমনজ্যোৎ কৌর—১১৯ রানে লিচফিল্ডকে ফেরান তিনি। উইকেট হারানোর পর কিছুটা ছন্দপতন হয় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে। ভারতের স্পিনাররা তখন ম্যাচে ফেরে। পেরি করেন ৭৭ রান, বেথ মুনি ২৪ রানে আউট হন।
শেষ দিকে অ্যাশলে গার্ডনারের ৪৫ বলে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে বড় স্কোরের স্বপ্ন জাগায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় ৪৯.৫ ওভারে ৩৩৮ রানে অলআউট হয় তারা। ভারতের পক্ষে শ্রী চরণী ও দীপ্তি শর্মা নেন দুটি করে উইকেট। এক উইকেট করে শিকার করেন ক্রান্তি, আমনজ্যোৎ ও রাধা যাদব।
৩৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করা যে সহজ হবে না, সেটা জানত ভারত। তার উপর ফর্মে থাকা প্রতীকা রাওয়ালকে পায়নি তারা। দায়িত্ব এসে পড়ে অভিজ্ঞ স্মৃতি মান্ধানার কাঁধে। ওপেনিংয়ে শেফালি বর্মা দুটো চার মেরেই কিম গার্থের বলে ১০ রানে আউট হন। এরপর লেগ সাইডে বল মারতে গিয়ে মান্ধানাও ফেরেন ২৪ রানে—রিভিউ নিয়ে আউট করায় অস্ট্রেলিয়া।
জেমিমা রদ্রিগেস
কিন্তু এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরে দেয় জেমিমা রদ্রিগেস ও অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের অবিচল জুটি। ধীরে ধীরে হাত খুলে খেলতে থাকেন দুজনেই। দু’দলের রান তোলার গতি তখন প্রায় সমান। দুই ব্যাটারই এগোচ্ছিলেন শতকের পথে। কিন্তু ৮৯ রানে সাদারল্যান্ডের বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন হারমান।
তবুও হাল ছাড়েননি জেমিমা। এই বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে বাদ পড়েছিলেন এক ম্যাচের জন্য। সেই জেমিমা সেমিফাইনালের মঞ্চে রচনা করলেন পুনর্জন্মের গল্প। এক প্রান্ত আগলে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় দলকে এগিয়ে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১৩৪ বলে ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ভারতকে তুলে দেন স্বপ্নের ফাইনালে।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩














