ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলেই ভারতের লাইফলাইন!

এশিয়া কাপের ফাইনালের পর ভারত জুড়ে কেবল একটি নামেরই বন্দনা চলছে। সেই নামটি হচ্ছে তিলক ভার্মা। তিনি কোনো রাজপরিবার থেকে আসেননি। খুবই সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে এসে নিজের অধ্যাবসায় আর চেষ্টা দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এই তিলক ভার্মাই এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের লাইফলাইন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিজে। খেলেছেন ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। যা ভারতকে এনে দিয়েছে এশিয়া কাপের নবম ট্রফি।

এক সাধারণ ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলেই হয়ে উঠলেন ইন্ডিয়া টিমের প্রাণ -ভোমরা! তিলকের গল্পের শুরুটা এভাবে করলেও ভুল হবেনা।  হায়দরাবাদের চান্দ্রায়ণ গুট্টার তরুণ ব্যাটার তিলক ভার্মা, যিনি নিজের ব্যাটে ভর করে ভারতের ঘরে তুলেছেন আরেকটি এশিয়া কাপের শিরোপা। চন্দ্রায়ণ গুট্টার সেই ছেলেটি, যে একসময় ভোর পাঁচটায় কোচের বাইকে চেপে অ্যাকাডেমিতে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পড়ত, আজ ভারতের নতুন নায়ক।

হায়দরাবাদ সবসময়ই ভারতের ক্রিকেটে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এখান থেকেই উঠে এসেছেন আজহারউদ্দিন কিংবা ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো কিংবদন্তিরা। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আলো ছড়াচ্ছেন তিলক। তবে সাফল্যের আলোয় মোড়ানো গল্পের আড়ালে লুকিয়ে আছে তার কঠিন সংগ্রামের অধ্যায়। একসময় ব্যাট কেনার টাকাও ছিল না পরিবারের হাতে। তবুও বাবার স্বপ্ন আর অবিচল মনোবলই বদলে দিয়েছে তিলকের জীবন।

বাবা নাম্বুরি নাগারাজু পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, মা গায়ত্রী দেবী গৃহিণী। সাধারণ এই পরিবার থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবা। ছোটবেলা থেকেই সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ছেলের মনে। বাবার হাতে পাওয়া এক ‘প্লাস্টিক ব্যাট’ দিয়েই শুরু হয় তিলকের ক্রিকেটযাত্রা। সেই ব্যাটকেই ধরে রেখেছিলেন নিজের স্বপ্নের প্রতীক হিসেবে, ঘুমাতেনও সেটির সঙ্গে।

তিলকের প্রতিভা প্রথম চিনতে পারেন কোচ সালিম বায়াশ। মাত্র ১১ বছর বয়সে টেনিস বলের ম্যাচে তার ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের লিগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তির সুযোগ করে দেন তিনি। কিন্তু সমস্যার জায়গা ছিল যাতায়াত আর খরচ। বাড়ি থেকে অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার, যা বহন করার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। সালিম কোচই দায়িত্ব নেন—প্রতিদিন নিজের স্কুটারে তিলককে আনা-নেওয়া করতেন, খাওয়া থেকে সরঞ্জাম সবই যোগাতেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নিয়মিত ক্রিকেটের লড়াই।

ভাগ্যও তখন ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ঝলক দেখিয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ব্যাটিং দেখে দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পর্যন্ত নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

Exit mobile version