হাটতেই পারছিলেন না। এই অবস্থায় ব্যাটিংটা চালিয়ে নেয়া মুস্কিল ছিলো। কিন্তু সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বলতে গেলে একপায়ের ওপর দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ২০১ রানের ইনিংস। জিততে হলে ২৯২ রান করতে হবে। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানো দলটা আর কোন উইকেট না হারিয়ে জয় তুলে নিলো তিন উইকেটে।
১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মিচেল স্টার্ক ফিরে যাওয়ার সময় ২৬ বল থেকে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। আর যখন অপরাজিত থেকে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন তখন তার নামের পাশে ২০১ রানের বিপরীতে বল ছিলো ১২৮ বল। দানবীয় ইনিংস খেলার পথে বারবারই পায়ের পেশিতে টান পড়েছে তার। কিন্তু হাল ছাড়েননি। দেখিয়ে দিয়েছেন দলের প্রয়োজেনে কিভাবে লড়তে হয়।
লড়াইয়ের পুরো সময়টাতে সঙ্গী হিসেবে পেলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে। যোগ্য সঙ্গী হিসেবে ম্যাক্সওয়েলকে সমর্থন দিয়ে গেছেন কামিন্স। ৬৮ বল খেলে করেছেন ১২ রান।
এ জয়ের ফলে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে। ৮ ম্যাচ শেষে ভারতের সংগ্রহ ১৬। সমান ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। রান গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় স্থানে। সেমিফাইনালের চতুর্থ স্থানের জন্য এখন নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান লড়ছে। তিন দলেরই পয়েন্ট ৮ এবং তিন দলেরই একটি করে ম্যাচ বাকি রয়েছে।
প্যাট কামিন্সের সঙ্গে ২০২ রানের পার্টনারশিপ ম্যাক্সওয়েলের। ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম উইকেটে এটা সর্বোচ্চ রান। একদিকে ম্যাক্সওয়েল চার ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে কামিন্স একের পর এক ডট বল দিয়েছেন। অপেক্ষা করেছেন ম্যাক্সওয়েলকে স্ট্রাইক দেওয়ার। তাইতো ৬৮ বল খেলে তার সংগ্রহ মাত্র ১২ রান। একটা মাত্র বাউন্ডারি তার ইনিংসে।
অন্যদিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তার ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসটি খেলতে ১২৮ বলের মোকাবেলা করেছেন। ২১টি বাউন্ডারির পাশাপাশি ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন ১০টি। ইনিংসের শেষ চার বলকেই বাউন্ডারি সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন। দুইবার বাতাসে ভাসিয়ে ও দুইবার মাটি কামড়ে।
এর আগে আফগানিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে তারা ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান করে। ইব্রাহিম জারদারের সেঞ্চুরি (১২৯*) এবং রশিদ খানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের এই সংগ্রহ।
ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে টস জয়ের পর আফগানিস্তান ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রহমতউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে ইব্রাহিম জাদরানের শুরুটা স্বস্তিদায়ক ছিল না। মাত্র ৩৮ রানে এ জুটিতে ভাঙ্গন ধরান জশ হ্যাজেলউড। তবে রহমত শাহের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন ইব্রাহিম জাদরান।
রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরান দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। রহমত শাহ অনেকটা দর্শক হয়ে ছিলেন। অন্যদিকে জাদরান ব্যাটিং তাণ্ডব করেন। তাইতো ৮৩ রানের জুটিতে রহমত শাহের রান মাত্র ৩০।
ইব্রাহিম জাদরান বেশ কয়েকটি জুটি গড়েছেন। অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শহীদি (২৬), আজমাতুল্লাহ ওমরজাই (২২) ও মোহাম্মদ নবীর (১২) সঙ্গে দারুণ সব জুটি করেছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন রশিদ খান। এ সময়ে ৪.৩ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে ৫৩ রান যোগ হয় মাত্র ১৮ বলে ৩৫ রান করেন রশিদ খান। আর ইব্রাহিম জাদরান ১৪৩ বলে ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। আট বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারিতে তিনি এই রান করেন। অন্যদিকে রশিদ খান দুইবার মাটি কামড়ে এবং তিনবার বাতাসে ভাসিয়ে বলকে সীমানার বাইরে পাঠিয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার সফল বোলার জশ হ্যাজেলউড। ৯ ওভারে ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া মিচেল স্টার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট নেন। এই এক উইকেটে জাম্পার উইকেট সংখ্যা দাঁড়ালো বিশে। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের তালিকায় এখন তিনি দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার দিলশান মাদুশাঙ্কা। তার শিকার সংখ্যা ২১।
টস: আফগানিস্তান
আফগানিস্তান ২৯১/৫ (ইব্রাহিম জারদান ১২৯* ও রশিদ খান ৩৫*)
অস্ট্রেলিয়া ২৯৩/৭ (ম্যাক্সওয়েল ২০১* ও মার্শ ২৪।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩
















