করাচি, লাহোরের বাইরে পাকিস্তানের একটি শহরের নাম শৈশব থেকে শুনে আসছি। রাওয়ালপিন্ডি। যাকে বাংলাদেশে পিন্ডি নামেই ডাকা হয় বেশি। সবচেয়ে বেশি শোনা যাওয়ার কারণের প্রথমটি ঐতিহাসিক। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্মরণীয় মন্তব্য আছে- ‘পিন্ডির গোলামি ছিন্ন করতে হবে।’ দ্বিতীয়টি একেবারে ক্রিকেটিয়। স্পিডস্টার শোয়েব আখতারকে বলা হতো রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস।
সেই রাওয়ালপিন্ডির নাম এখন থেকে বাংলাদেশ মনে রাখবে নতুন কারণে। নতুনভাবে। পিন্ডিতেই টেস্টে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে শান্ত-লিটন-মুশফিক-মিরাজের বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের পর দ্বিতীয় টেস্টে ছয় উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের মত দ্বিতীয় টেস্টেও কোনো সেশনেই বাংলাদেশকে পরাভূত করতে পারেনি শান মাসুদের দল।
অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে শুরুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল এই পাকিস্তান সফর। হাসিনা সরকারের পতনের পর টালমাটাল দেশে সবকিছুই নড়েচড়ে যায়। কিন্তু ক্রিকেটাররা ধরে রেখেছিলেন নিজেদের মনোযোগ। অনুশীলনে ভাটা পড়েনি। দলটি পাকিস্তানে যায়ও বেশ নীরবে, নিভৃতে।
প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে জয়টা ছিল দুর্দান্ত। পাকিস্তানের মাটিতে তো বটেই, পাকিস্তানের বিপক্ষেই প্রথম টেস্ট জয় বাংলাদেশের। আহত বাঘের মত দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছে পাকিস্তান। দলে স্পিনার এসেছিল। পরিবর্তন আনা হয়েছিল পেস ডিপার্টমেন্টেও। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টও বাংলাদেশ জিতে নিলো লড়াই করে।
পিন্ডির দ্বিতীয় টেস্ট অনেক কারণেই মনে থাকবে। ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লিটন-মিরাজের দুর্দান্ত লড়াইয়ে সেই বাংলাদেশ থেমেছে ২৬২ রানে। লিটনের ১৩৮ ও মিরাজের ৭৮ রান ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে ধরে বাংলাদেশকে। মিরাজ আউট হওয়ার পর লিটনকে দারুণ সমর্থন দেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের কোন টেল এন্ডার এমন ধৈর্য ধরে ৫১ বল খেলে ১৩ রান করেছে?
পিন্ডি শোয়েব আখতারের শহর। সেই শহরেই বাংলাদেশের পেসাররা দেখিয়েছে বীরত্ব। প্রথমবারের মত পেসাররাই তুলে নিলেন ১০টি উইকেট। রানা-তাসকিন-হাসান এই পেসারত্রয়ীর দাপটে কেঁপেছে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। অথচ আমির সোহেলরা বিপরীত দৃশ্য দেখবেন বলেই আশা করেছিলেন।
ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা, পেস অ্যাটাকে উড়িয়ে দেওয়া- বাংলাদেশের এমন আগ্রাসন আর কবে দেখেছে এই ক্রিকেটবিশ্ব? মিরপুর বা চট্টগ্রামের চেয়ে দেশের বাইরে হওয়ায় এই আনন্দের পরিমাণ পাঁচগুণ বেশি।
বিশেষ করে রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের শহরেই যখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এক্সপ্রেসের আগ্রাসন দেখি তখন তো জয়ের আনন্দে ডুবে যেতেই ইচ্ছে করে। এ তো নতুন বাংলাদেশের জয়যাত্রা।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩



















