পার্থ ও মেলবোর্ন টেস্টে পরাজয়ের পর সিডনি টেস্টেও ব্যাকফুটে পাকিস্তান। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ৮২ রানের লিড পেলেও হাতে আছে মাত্র ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের ব্যাটাররা মূলত হ্যাজলউডের আগুনে বোলিংয়ে পথ হারিয়েছেন। ৬০ রানে চার উইকেট হারানো পাকিস্তান ইনিংসের ২৫তম ওভারে এসে রীতিমতো উড়ে যায়। হ্যাজলউডের করা এই ওভারের প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে আউট হন সৌদ শাকিল (২), সাজিদ খান (০) ও আগা সালমান (০)।
অথচ গল্পটা অন্য রকম হতে পারতো। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে আমের জামালের বিরোচিত ৮২ রানের পর বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। সে সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার দারুণ শুরুর পরও প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৩১৩ রানের জবাবে তারা ২৯৯ রানে অলআউট হয়। আর সফরকারীরা লিড পায় ১৪ রানের।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলে শূন্য রানে আউট হয়ে পাকিস্তানের বিপদের শুরুটা করেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। মিচেল স্টার্কের বলে স্ট্যাম্প উড়ে যায় শফিকের। পাকিস্তান দল তখনও বুঝতে পারেনি তাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ূব। স্ট্রাইক নিয়ে প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মারেন ওয়ান ডাউনে খেলতে নামা শান মাসুদ। দলীয় ১ রানে দুই উইকেট হারায় সফরকারীরা।
তৃতীয় উইকেটে জুটিটা ১৮তম ওভার পর্যন্ত টেনে নেন সাইম আইয়ূব ও বাবর আজম। এই ওভারের চতুর্থ বলেই ডানহাতি অফব্রেক বোলার নাথান লিওনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ৩৩ রান করা সাইম।
দুই দিকে দুই ডানহাতি অফব্রেক বোলারের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলছিলেন সাইম ও বাবর। কিন্তু সাইমের বিদায়ের পরই কিনা মনোসংযোগ হারান বাবরও। ২১তম ওভারে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আউট হন ট্রাভিস হেডের বলে। দলীয় ৬০ রানে পাকিস্তানের পতন হয় চতুর্থ উইকেটের।
আর ২৫তম ওভারে তো পুরো দলটাকেই বিপদের মুখে ফেলে দিলেন জশ হ্যাজলউড। অসাধারণ তিন ডেলিভারিতে আউট করেন দুই ডেলিভারিতে আউট করেন সৌদ শাকিল (২), সাজিদ খান (০) ও আগা সালমানকে (০)।
আমের জামালের রেকর্ড:
পার্থে টেস্ট ক্যাপটা মাথায় দিয়ে তৃপ্তি হাসি হেসেছিলেন আমের জামাল। অভিষেক ম্যাচে বল হাতে খারাপ করেননি৷ যদিও আফসোস ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়াই জিতে নেয়। সিডনিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টেও দেখালেন খেল! ব্যাট হাতে দলের দুঃসময়ের কান্ডারী হওয়ার পর বোলিংয়ে আরেকবার তার ঝলকানি। তাতে সিডনি টেস্টে অসিদের ৩০০ রানের আগে গুটিয়ে শুক্রবার তৃতীয় দিন শেষে ৮২ রানের লিডও পেলো পাকিস্তান।
বুধবার কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ রান নিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরদিন বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতায় মাত্র ৪৬ ওভার খেলা হয়। যেখানে স্বাগতিকরা সংগ্রহ করে ২ উইকেটে ১১৬ রান। তৃতীয় দিন সংগ্রহটা ২৯৯ এর ঘরে নিতে তাদের খোয়াতে হলো বাকি ৮ উইকেট। আর প্রথম ইনিংসে ৩১৩ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
চা বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে সাজিদ খানের ব্রেক থ্রু স্বস্তি এনে দেয় পাকিস্তান শিবিরে। মার্শের সঙ্গে সবে খুঁটি হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা ক্যারির বেল উপড়ান ৩০ বছর বয়সী এই বোলিং অলরাউন্ডার। যার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার ৮৪ রানের জুটিও ভেঙে চুরমার হয়। এরপর বাকি সময়টায় চলে জামাল ঝলক।

এটাই ডেভিড ওয়ার্নারের শেষ টেস্ট। সেজন্য সবারই দৃষ্টি ছিল তার ওপর। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তিনি সবাইকে হতাশই করেন। ৬৮ বল মোকাবিলা করে ৩৪ রান করে আউট হয়ে যান। টিকতে পারেননি খাজাও। আমের জামালের শর্ট বল লেগ সাইড দিয়ে বের হওয়ার পথে সজোরে ব্যাট চালান তাতে বল ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা রিজওয়ানের গ্লাভসে। যদিও আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেননি শুরুতে। কিন্তু রিজওয়ান নিশ্চিত হওয়ার রিভিউ চেয়ে নেন। আর রিভিউতে শেষ রক্ষা হয়নি খাজার। পার্থে এক ইনিংসে ৯০ রান করা খাজা পরের দুই ইনিংসে ৪০ পেরোতেই নিতে হলো বিদায়।
দুই ওপেনার আউট হয়ে যাওয়ার পর লাবুশেন ও স্মিথ খানিকটা আশা দেখান। তবে তৃতীয় দিন শুরু হওয়ার পর তারাও বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি। এই জুটির সৌজন্যে অসিরা পায় ৭৯ রান। অভিজ্ঞ স্মিথ ও লাবুশেন প্যাভিলিয়নে ফেরার পর অস্ট্রেলিয়ার রানের চাকা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মিচেল মার্শ ও অ্যালেক্স ক্যারি ধীরে ধীরে সেই স্থবিরতা কাটিয়ে রানের গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরান।
তিন টেস্টের লড়াইয়ে প্রথম দুটিতে জিতে সিরিজের ট্রফিটা আগেই নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তাই অন্তত শেষ টেস্টটা জিতে জয়ের খাতাটা খুলতে চায় পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে):
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৭৭.১ ওভারে ৩১৩ (রিজওয়ান ৮৮, জামাল ৮২; কামিন্স ৫/৬১, ২/৭৫ স্টার্ক)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৯৯ (খাজা ৪৭, ওয়ার্নার ৩৪, লাবুশেন ৬০, স্মিথ ৩৮, মার্শ ৫৪; সালমান ২/৪৩, জামাল ৬/৬৯)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ৬৮/৭* (আইয়ুব ৩৩, বাবর ২৩, রিজওয়ান ৬, জামাল ০; হ্যাজেলউড ৪/৯)।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩














