ঢাকায় এসিসি সভা ঘিরে কূটনৈতিক টানাপড়েন, চাপে বিসিবি

আসন্ন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) নিয়ে চলছে তীব্র কূটনৈতিক টানাপড়েন। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২৪ ও ২৫ জুলাই ঢাকায় এজিএম আয়োজনের কথা থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এতে আপত্তি জানিয়েছে। বিপরীতে এসিসির সভাপতি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বর্তমান প্রধান মহসিন নাকভি সভা ঢাকাতেই আয়োজন করতে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।

ভারত আগেই আগস্টে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছে। এবার তারা ঢাকার এজিএম ভেন্যুতেও আপত্তি তুলে পাকিস্তানের বিপক্ষে কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিসিসিআই নাকি শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও ওমানকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছে যেন তারা ঢাকায় না আসে।

বিসিসিআইয়ের কৌশলে চাপে পড়েছে আয়োজক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কারণ এসিসির গঠনতন্ত্র অনুসারে সভা আয়োজনের জন্য কমপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দেশসহ ১০টি পূর্ণ বা সহযোগী সদস্য দেশের উপস্থিতি জরুরি। এখনও সেই কোরাম পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ বিসিবির অভ্যন্তরীণ এক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, “মনে হচ্ছে ঘটনাটি একটি ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। পিসিবি সভাপতির পক্ষ থেকে বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব পাওয়ার পর (বিসিবির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান) আমিনুল ইসলাম আরও সতর্কভাবে বিষয়টি সামলাতে পারতেন। আমার মনে হয় তিনি আরও সময় নিতে পারতেন, সম্ভবত অনভিজ্ঞতার কারণে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি না বুঝেই তিনি এজিএম আয়োজনে সম্মতি দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, বিসিবির একাংশ এই সভা আয়োজন নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা বিসিবি সভাপতি মহিবুল আনাম বুলবুলকে ঢাকার সভাটি বাতিলের অনুরোধও করেছেন। কিন্তু বুলবুল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “তিনি আগে থেকেই পিসিবিকে কথা দিয়েছেন, তাই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তিনি সরে আসতে পারবেন না।”

এসিসির পূর্ণ সদস্য তালিকায় পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ রয়েছে—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। আর সহযোগী ও নন-টেস্ট খেলুড়ে সদস্যদের মধ্যে রয়েছে নেপাল, আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কাতার, বাহরাইন, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ। তবে বেশ কয়েকটি দেশের উপস্থিতি অনিশ্চিত, বিশেষ করে ভারতঘনিষ্ঠ বোর্ডগুলোর।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এসিসি সভাপতি মহসিন নাকভি সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসির বার্ষিক সভায়ও উপস্থিত ছিলেন না। আইসিসির বর্তমান সভাপতি জয় শাহ, যিনি বিসিসিআইয়ের সাবেক সচিব, তার উপস্থিতিতেই হয় এই সভা।

এদিকে পাকিস্তানও চেষ্টায় আছে আফগানিস্তানকে ঢাকার সভায় যুক্ত করতে। মহসিন নাকি ব্যক্তিগতভাবে আফগান বোর্ডকে রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, যদিও ভারত আফগানিস্তানকে আশ্বস্ত করেছে—তারা ঢাকায় যাবে না।

সব মিলিয়ে, এসিসির এজিএম ভেন্যু ঘিরে এই কূটনৈতিক চাপানউতোর এখন বিসিবির জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেট নয়, ভেন্যু এখন যেন শক্তির লড়াইয়ের নতুন মঞ্চ।

Exit mobile version