বাংলাদেশের হারের দিনে বিস্ফোরক সাকিব

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের যে কোনো ফরম্যাটে তার উপস্থিতি মানেই দলকে ভরসা দেওয়ার এক নাম। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এক ভিন্ন মঞ্চে, ভিন্ন পরিস্থিতিতে সাকিব দেখালেন তার ক্রিকেটের ক্ষিপ্রতা, অথচ দিনশেষে তার দলও হারল, বাংলাদেশও হারল।

গোয়ালিয়রে ভারতীয় দলের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যেন খুঁজে পাচ্ছিল না নিজেদের ছন্দ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরে যাচ্ছিলেন প্যাভিলিয়নে, যেন মেঘের আড়ালে সূর্যের আলোর মতো ম্লান হয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশের আশাগুলো। কেবলমাত্র অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাও বেশিক্ষণ টিকল না।

প্রথম ওভারেই বিদায় নেন লিটন কুমার দাস। আর্শদীপ সিংয়ের ডেলিভারিতে সেই শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার কোনো সুযোগই পেল না বাংলাদেশ। ১৯.৫ ওভারে ১২৭ রানে অলআউট হলো তারা। এই ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৫ রানের ইনিংসই বাংলাদেশের একমাত্র আশার আলো হয়ে রইল। ভারতীয় বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ যেন ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকে।

এরপর ভারত মাত্র ১১ ওভার ৫ বলেই সহজ জয় নিশ্চিত করে, বাংলাদেশকে হারিয়ে ৭ উইকেটে এগিয়ে গেল সিরিজে। বাংলাদেশের বোলাররাও ছিল অনেকটাই নিষ্প্রভ। বোলিং কিংবা ফিল্ডিং কোনো ক্ষেত্রেই এদিন বাংলাদেশ নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি।

আর অন্য প্রান্তে, মাইলের পর মাইল দূরে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সাকিব আল হাসান ছিলেন এক ভিন্ন যুদ্ধে। টি-টেন লিগে লস অ্যাঞ্জেলেস ওয়েভসের হয়ে ব্যাট হাতে ঝলসে উঠলেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের পর সাকিব যেন নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে নেমেছেন। একদিকে বাংলাদেশ যখন ভারতে চাপে ছিল, অন্যদিকে সাকিব যেন যুক্তরাষ্ট্রে একাই লড়াই করে যাচ্ছিলেন।

টেক্সাস গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ১১ বলে ২০ রানের ইনিংস খেললেন সাকিব, প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর শাসন জারি করে। তার ক্ষিপ্র শটগুলো যেন বলছিল, “এখনো শেষ হয়নি সাকিবের গল্প।” টিম ডেভিডের সঙ্গে ৭৭ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়ে দলকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যান সাকিব। প্রতিটি শটে ছিল তার অভিজ্ঞতার ছাপ, দায়িত্বের প্রতিফলন।

কিন্তু দিনটি সাকিবের দলের জন্য সুখকর হলো না। সাকিবের বোলিং ছিল তার দায়িত্বের শেষ চেষ্টা। ৩ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েও নিজের দলকে জেতাতে পারেননি। টেক্সাস মাত্র ৮.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নিল। জেমস ফুলারের ১০ বলে ৩৯ রানের দুরন্ত ইনিংসের সামনে সাকিবের প্রচেষ্টা আজ ব্যর্থ।

বাংলাদেশের মাঠ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট মাঠ—দুই প্রান্তেই সাকিবের লড়াই, দুই প্রান্তেই দল হেরেছে। কিন্তু এই হারের মাঝেও সাকিবের ব্যাটিং ছিল এক আগুনের ফুলকি। যেন সব কিছু ভুলে, কেবল নিজের খেলাটাই খেলছিলেন। তার প্রতিটি শট, তার প্রতিটি বোলিং ডেলিভারি—সবটাই যেন ভক্তদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল, সাকিবের মতো ক্রিকেটার খুব কমই আসে।

Exit mobile version