বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিএনপি–সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার গুঞ্জন ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। যার ফলে ৬ অক্টোবরের নির্বাচন নিয়ে উত্তাপও বেশ কমে এসেছে বলেও মনে করছেন অনেকে। বিসিবি নির্বাচনের পরিচালক পদের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তখন পর্যন্ত ৫১টি ফরম জমা পড়ে।
যাচাই-বাছাই শেষে গতকাল সোমবার ৩টি মনোনয়ন অবৈধ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন আছেন ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ ফুয়াদ রেদোয়ান। ফলে ঢাকা বিভাগ থেকে বাকি দুই প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে যাচ্ছেন।
বাতিল হওয়া বাকি দুটির মধ্যে একটি চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার, আরেকটি রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মনোনয়ন। তবে তফসিল অনুযায়ী আজ আপত্তির সূচি রয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের আবেদন করার অধিকার রয়েছে। তারা যদি আবেদন করেন তাহলে শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ক্যাটাগরি ১ (জেলা-বিভাগ) থেকে মনোনয়ন নিয়েছিলেন ২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা ৩ জন, চট্টগ্রাম ৫ জন, খুলনা ৩ জন, রাজশাহী ৪ জন, সিলেট ৩ জন, রংপুর ৬ জন, বরিশাল থেকে ১ জন মনোনয়ন নেন। ক্যাটাগরি ২ (ঢাকার ক্লাব) থেকে মনোনয়ন নেন ৩২ জন। এছাড়া ক্যাটাগরি ৩ থেকে মনোনয়ন নেন ৩ জন।
তবে বিভেদ-অসন্তোষে চাপা উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্যাটাগরি-২ বা ক্লাব ক্যাটাগরির নির্বাচন। ক্লাব থেকে পরিচালক প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নেতা-পুত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রকৃত ক্লাব সংগঠকেরা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন এককভাবে। ক্লাব সংগঠকেরা যে তাঁদের বাদ দিয়ে প্যানেল করাটাকে ভালোভাবে নেননি, তার প্রমাণ এই ক্যাটাগরিতে ১২টি পরিচালক পদের জন্য ৭৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩২ জনেরই মনোনয়নপত্র কেনা।
তাঁদের মধ্যে ৩০ জন তা জমা দিয়েছেন। জমা দেয়নি শুধু কাকরাইল বয়েজ ক্লাবের কাউন্সিলর ও বর্তমানে বিসিবির পরিচালক সালাহউদ্দিন চৌধুরী এবং ব্রাদার্সের কাউন্সিলর ও বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেনের ছেলে ইশরাক হোসেন। চারটি ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির অন্য চার নেতা বরকতউল্লা বুলুর ছেলে ওমর শরীফ মো. ইমরান, মির্জা আব্বাসের ছেলে মির্জা ইয়াসির আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু ও সালাহউদ্দিন আহমদের ছেলে সাঈদ ইব্রাহিম আহমদ।
সরকার-বিএনপি আসন ভাগাভাগিতে বর্তমান বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলামই এখন পর্যন্ত ভবিষ্যৎ সভাপতি হিসেবে একমাত্র প্রার্থী বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের পক্ষ কিছুটা ব্যাকফুটে। সমঝোতায় তামিমকে আপাতত ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান করার পাশাপাশি সেন্টার অব এক্সিলেন্স গঠনের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর স্বপ্নপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুঞ্জন আছে, তিনি দুটি সহসভাপতি পদের একটি পেতে পারেন, তবে ক্লাবগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হওয়ায় একই গুঞ্জন অন্যদের নিয়েও আছে এবং সেটাই বেশি জোরালো। অবশ্য দুটি সহসভাপতি পদই যে ক্লাব থেকে আসা পরিচালকদের দুজন পাবেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের মূল শক্তি ক্যাটাগরি-২–এর ক্লাব কাউন্সিলররা আর সরকারপন্থীদের শক্তি ক্যাটাগরি-১–এর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং ক্যাটাগরি-৩–এর সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার কাউন্সিলররা।
ক্লাব ক্যাটাগরিতে প্রকৃত সংগঠকদের অনেককে বাদ দিয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার ছেলেকে কাউন্সিলর করা হয়। অতীতে এসব ক্লাবকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা সংগঠকদের বাদ দিয়ে হঠাৎ রাজনৈতিক নেতা-পুত্রদের সামনে নিয়ে আসায় বিভাজন তৈরি হয়েছে ক্লাবগুলোর মধ্যে।
একাধিক সূত্র জানায়, সমঝোতায় ঠিক হয়েছে, ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে বিএনপিপন্থীরা পাবে ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১০টি পরিচালক পদ। এ ক্ষেত্রে ওল্ড ডিওএইচএসের কাউন্সিলর তামিম ইকবাল ছাড়াও বর্তমান বোর্ড পরিচালক ও সূর্যতরুণের ফাহিম সিনহা, মোহামেডানের মাসুদুজ্জামান, ইন্দিরা রোডের রফিকুল ইসলাম, ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের ইশতিয়াক সাদেক, ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের শানিয়ান তানিম নাভিন, বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের ওমর শরীফ মো. ইমরান, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের মির্জা ইয়াসির আব্বাস, এক্সিওম ক্রিকেটার্সের ইসরাফিল খসরু ও ফেয়ার ফাইটার্স স্পোর্টিং ক্লাবের সাঈদ ইব্রাহিম আহমদের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে শেষ মুহূর্তে এখান থেকে অন্তত দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপিপন্থীদের অলিখিত প্যানেলে চলে আসতে পারেন বিসিবির বর্তমান দুই পরিচালক ইফতেখার রহমান ও মনজুর আলম। এর মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের পরিচালক পদে ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়বে না।
এই তিন বিভাগের মধ্যে খুলনা থেকে দুটি পরিচালক পদের জন্য মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন দুজন-খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খান আবদুর রাজ্জাক এবং খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর জুলফিকার আলী খান। তবে আপিল গ্রহণ ও শুনানি এবং ১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনে জানা যাবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩















