বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব আল হাসানের জীবনে গত আট মাস যেনো দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আসতে পারছেন না দেশে, পড়েছেন আইসিসির বোলিং নিষেধাজ্ঞায়, মিস করেছেন স্বপ্নের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, আদালতে হয়েছে তার সম্পত্তি ক্রোপের নির্দেশ।
সবকিছু মিলিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না সাকিব। তবে শেষ পর্যন্ত মুক্ত হলেন ‘অবৈধ’ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ থেকে। ইংল্যান্ডের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া সর্বশেষ পরীক্ষায় তাঁর অ্যাকশনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ পাঁচ মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাঠে ফিরতে আর কোনো বাধা রইল না তাঁর।
বর্তমানে সাকিব পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো’কে মুঠোফোনে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাকিব। চলুন সাকিবের মুখ থেকেই শোনা যাক সেই সময়কার পরিস্থিতি আর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তার লড়াইয়ের জার্নি নিয়ে।
নিষেধাজ্ঞার গল্প: হঠাৎ কেন সন্দেহ?
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইংলিশ কাউন্টির দল সারের হয়ে এক ম্যাচে বোলিং করার সময় প্রথমবারের মতো প্রশ্ন ওঠে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। এরপরই আইসিসির নিরীক্ষায় ধরা পড়ে যে তাঁর কিছু ডেলিভারিতে হাতের বাঁক অনুমোদিত সীমার বেশি ছিল। ডিসেম্বরে তাঁকে সব ধরনের ক্রিকেটে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।
নিজের ক্যারিয়ারে প্রথমবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘গাড়িরও মাঝেমধ্যে পার্টস নষ্ট হয়, ঠিক করতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও তেমন কিছু একটা হয়েছে।’ তবে এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না তিনি। বরং সমাধানের পথ খুঁজেছেন।
চ্যালেঞ্জ ও লড়াই: কীভাবে ফিরে এলেন?
নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই নিজের বোলিং অ্যাকশন শোধরানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন সাকিব। প্রথমে শ্রীলঙ্কায় এলপিএলে থাকার সময় কাজ শুরু করেন, তবে সেখানে কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাননি। এরপর ইংল্যান্ডে সারের কোচ গ্যারেথ বেটির সহায়তায় নতুনভাবে পরিশোধন প্রক্রিয়া শুরু করেন।
চেন্নাইয়ে দেওয়া আগের পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে সাকিব বলেন, ‘ওরা টেস্টটা নিতে খুব তাড়াহুড়া করেছে, মেশিনারিজ বা ক্যামেরা সেটআপও হয়তো পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না।’ তবে এবার সময় নিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি, যার ফলাফল মিলেছে লাফবোরোতে।
ফেরার অপেক্ষা, তবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত?
বোলিং নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ দলের হয়ে শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে সাকিব সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন, ‘দেখি, কী করতে পারি।’
সাকিবের বোলিং নিয়ে সব সংশয় দূর হলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে-বাংলাদেশ দলে কি আবার ফিরবেন তিনি? নাকি ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার? উত্তর সময়ই দেবে।