নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর নিগার সুলতানা জ্যোতির দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য ঘুরে গেল কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রি ভেনুগোপালের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রিভিউর সিদ্ধান্ত বদলে যায়, যার ফলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত মাটিতে মিশে যায়।
বাংলাদেশি মেয়েদের দেওয়া ১৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে। মাত্র ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। ১০৩ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতনের পর ম্যাচটি বাংলাদেশের দখলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিদার নাইট অপরাজিত ৭৯ রানে দলকে টেনে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে—৪ উইকেটে জয় পায় ইংলিশরা। অথচ অনফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে দু’বার আউট হয়েছিলেন নাইট, কিন্তু দু’বারই টিভি আম্পায়ার গায়ত্রির সিদ্ধান্তে রক্ষা পান তিনি।
উইজডেনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গায়ত্রি ভেনুগোপাল এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি ওয়ানডে ম্যাচে টিভি আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এত অল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই তাঁকে এই বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে দায়িত্ব দিয়েছে আইসিসি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আইসিসি নারীদের এই আসরে পুরোপুরি নারী আম্পায়ার প্যানেল গঠন করেছে—যেখানে আছেন অভিজ্ঞ সু রেডফার্ন, ক্লেইরে পোলোসাক ও জ্যাকুলিন উইলিয়ামসের মতো নাম। কিন্তু তাঁদের পাশাপাশি অনভিজ্ঞ আম্পায়াররাও দায়িত্ব পেয়েছেন, যেমন গায়ত্রি, ক্যানডেস লা বোর্ডে এবং ভারতীয় এন জননী।
এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। কারণ, পুরুষদের বিশ্বকাপে যেখানে ১৬ জনের মধ্যে ১২ জনই আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার, সেখানে মেয়েদের বিশ্বকাপে অনভিজ্ঞদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে আইসিসির মানদণ্ড নিয়ে। অনেক সময় নারী আম্পায়াররা প্রযুক্তির সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে উঠতে না পারায় মেয়েদের দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও নিয়মিত ডিআরএস ব্যবহার হয় না।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে বিতর্কের সূচনা মারুফা আক্তারের দ্বিতীয় ওভারে। তাঁর ডেলিভারি উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরেন নিগার সুলতানা জ্যোতি, আউটের আবেদন গৃহীত হয়। কিন্তু নাইট রিভিউ নেন, এবং রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট-প্যাডের মাঝ দিয়ে গেছে। ব্যাটে লেগেছে কি না নিশ্চিত না হওয়ায় তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রি সিদ্ধান্ত বদলে দেন—নট আউট। পরে এলবিডব্লিউ পরীক্ষায়ও বলের লাইন ‘আউটসাইড’ ধরা পড়ে, ফলে ফের রক্ষা পান নাইট।
আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আসে ১৫তম ওভারে। ফাহিমা খাতুনের বলে কভার অঞ্চলে ফিল্ডার স্বর্ণা আক্তার তালুবন্দী করেন বলটি। নাইটও ক্রিজ ছাড়েন, মনে করেছিলেন আউট হয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রি রিপ্লে দেখে বলেন, “দৃশ্য অস্পষ্ট, বলের নিচে আঙুল আছে কি না বোঝা যাচ্ছে না।” ফলাফল—অনফিল্ড সিদ্ধান্ত বদলে নট আউট। তখন নাইটের রান ছিল ০, পরের জীবনে তিনি তুলে নেন ৭৯* রান এবং দলকে জেতান।
বাংলাদেশি সমর্থকদের মতে, এই দুটি সিদ্ধান্তই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অভিজ্ঞতার অভাব থাকা সত্ত্বেও গায়ত্রিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়াকে তাঁরা “অন্যায়” বলে দাবি করেছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও বলছেন, প্রযুক্তি নির্ভর সিদ্ধান্তে অনভিজ্ঞ আম্পায়ারদের উপস্থিতি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে জয় ইংল্যান্ডের হলেও, বিতর্কের আগুনে পুড়ছে ক্রিকেট বিশ্ব। অনেকেরই প্রশ্ন—বাংলাদেশের মেয়েরা কি হেরে গেল মাঠে, নাকি সিদ্ধান্তের টেবিলে?
