গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। চোখে আসতে পারতো আনন্দাশ্রু। কিন্তু সোমবার রাতে নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে যা হয়েছে তা শুধু আফসোসই বাড়িয়েছে। নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা থাকা বাংলাদেশ শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তায় ৩ উইকেটে হেরে গেছে। এই হারের ফলে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলা স্বপ্নের অনেকটা ইতি হয়েছে।
নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান করেছিল। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয়।
স্বর্ণা আক্তারের চোখেমুখে হতাশা। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রাবেয়া আক্তার। নিগার সুলতানার চোখে প্রশ্ন। আর টেলিভিশন সেটের সামনে থাকা লাখো বাংলাদেশির মাথায় হতাশার হাত। কি হলো এটা। এমন সহজ ক্যাচ মিস। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেওয়া ডি ক্লার্কের ক্যাচ ছেড়ে দেন স্বর্ণা আক্তার। আর তাতেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের।
৮ বলে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ৯ রান। তখনই রাবেয়ার বলে ডি ক্লার্ক ক্যাচ তোলেন। বল হাতে নিয়েও স্বর্ণা আক্তার তা হাতে রাখতে পারেননি। তার এই ক্যাচ রাখতে না পারার ব্যর্থতাই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। আর সুযোগ দেননি ক্লার্ক। পরের ওভারে প্রথম বলে ৪ ও তৃতীয় বলে ৬ মেরে দলকে জয় এনে দেন।
অথচ ম্যাচের লেখাটা হতে পারতো অন্যরকম। টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং নেয়। শুরুটা ছিল নড়বড়ে। রান ১৬০ হবে কিনা তা নিয়ে একটা প্রশ্নও তৈরি হয়। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে এসে ভিন্ন খেলা দেখায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথম ২৫ ওভারে মাত্র ৭৩ রান। পরের ২৫ ওভারে প্রথম ২৫ ওভারের দ্বিগুনের বেশি রান আসে। ১৫৭ রান করে বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখায়।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ব্যাটারদের রানটা ছিল দেখার মতো। ৩০, ২৫, ৫০, ৩২, ৫১। শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারের রান এটি। বাংলাদেশের ইনিংসে এমন রান কবে দেখা গেছে তা অনুসন্ধানের বিষয়।
লক্ষ্যমাত্রা খুব যে বড় ছিল তা নয়। বরং বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেশ ভালোভাবে চেপে ধরেছিল। ৭৩ রান করতে বাংলাদেশ হারিয়েছিল দুই উইকেট। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ৭৮ রান করতে অর্ধেক ব্যাটার দর্শকে পরিণত হন। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান মারিজানে ক্যাপ ও কোলে ট্রাইয়ন। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৮৫ রানের জুটি বেঁধে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। ক্যাপ ৫৬ রান করেন ৭১ বলে। আর ট্রাইয়নের সংগ্রহ ছিল ৬৯ বলে ৬২ রান।
তবে মূল নায়ক ছিলেন ডি ক্লার্ক। ২৯ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আগের ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন এমনই এক ইনিংস। বিপদের সময় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। নিশ্চিত হারের ম্যাচে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে মাঠে নেমে ৫৪ বলে অপরাজিত ৮৪ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এবারও তাই করেছেন। দলকে ম্যাচ জিতিয়েছেন, সতীর্থদের চোখে নায়ক হয়েছেন বিপরীতে কেড়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩২/৬ (স্বর্ণা ৫১, শারমিন ৫০, নিগার ৩২; এমলাবা ২/৪২, ডি ক্লার্ক ১/৩৯)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৩ ওভারে ২৩৫/৭ (ট্রায়োন ৬২, কাপ ৫৬, ডি ক্লার্ক ৩৭* ভলভার্ট ৩২; নাহিদা ২/৪৪, ঋতু ১/২৯, রাবেয়া ১/৪৮, ফাহিমা ১/৫১)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী।
