ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের গৌরবময় দিন এখন কেবলই স্মৃতি। একসময় টেস্ট ক্রিকেটের রাজত্ব করা এই দল বছরের পর বছর ধরে ধুঁকছে ফলাফলে, হারছে ধারাবাহিকতা ও গৌরব। সাম্প্রতিক ভারত সফরে প্রথম টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারের পর সেই পুরনো প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে—কোথায় হারিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জৌলুস?
এই পতনের কারণ হিসেবে অধিনায়ক রোস্টন চেইস সম্প্রতি জানিয়েছেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও অর্থনৈতিক সংকটই তাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। তার সঙ্গে একমত হয়েও কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা তুলে ধরেছেন আরও গভীর এক বাস্তবতা—দেশের হয়ে খেলার আবেগ ও ভালোবাসার অভাবই নাকি আসল সংকট।
ভারতে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লারা বলেন,
‘অর্থ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু করতে হলে মূলধন লাগে, সেটি অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু রোস্টন চেইস ও অন্যদের আমি বলতে চাই—তারা কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়? ক্রিকেট কি তারা হৃদয়ে ধারণ করে? এই মানসিকতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। কারণ, এই জায়গায় পরিবর্তন এলেই পথ বের করা সম্ভব।’
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের বড় সমস্যা—জাতীয় দলে সুযোগ পেতেই অনেক খেলোয়াড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ছুটে যান। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল কিংবা সুনিল নারাইনের পথ অনুসরণ করছেন নতুন প্রজন্মের অনেক ক্রিকেটারও। তবে লারা এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি দোষ দেখেন না।
‘যে কেউ যদি বেশি আয় করতে চায়, তাতে দোষ নেই,’ বলেন টেস্টে ৪০০ রানের ইনিংস খেলা এই কিংবদন্তি।
‘তবে তাদের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসাটাও থাকতে হবে। আর বোর্ডকেও এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ক্রিকেটাররা বুঝতে পারে—ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা কতটা সম্মানের।’
লারা উদাহরণ হিসেবে তুলেছেন মেসিকে।
‘মেসি ইউরোপে বেড়ে উঠেছে, খেলেছে বার্সেলোনা ও পিএসজিতে। কিন্তু গর্বের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়েই খেলেছে এবং বিশ্বকাপ জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডও একইভাবে নিজেদের খেলোয়াড়দের দেশমুখী রাখছে। আমাদেরও সেই পথ খুঁজে নিতে হবে।’
শেষে লারা যোগ করেন,
‘এটা কারও দিকে আঙুল তোলার ব্যাপার নয়। দল, প্রশাসন, কোচ ও খেলোয়াড়—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যদি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করা যায়, তাহলে আবারও আমাদের পুনর্জাগরণ সম্ভব।’
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩


















