বছর শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট। সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা জানালেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে আরও ভালো পারফর্ম করতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে বিসিবি যদি চায় তাহলে বাকি দুই ফরম্যাট অর্থাৎ ওয়ানডে ও টেস্টের অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। তামিম ইকবাল ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। এরপরে তামিমের নেতৃত্ব ছাড়ার সুবাদে সাকিবকে দেয়া হয় তিন ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব। সাকিব আল হাসান সেটা ছেড়ে দেন গেল বছরের শুরুতে। সেই সুবাদে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শান্ত হন তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক। এই তিন সংস্করণের দায়িত্ব নেওয়ার পরই মনে হলো, এবার বুঝি অধিনায়কত্ব নিয়ে কিছুটা স্বস্তি এলো কিন্তু এক বছর না যেতেই আবারও একাধিক অধিনায়কের পথেই পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। কারণ টি- টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু সেটা গুঞ্জন থেকে তখন আর বাস্তব রূপ পায়নী। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শান্ত। নিজের ব্যাটিং নিয়ে আরও মনোযোগী হতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে।
বিসিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নাজমুল চূড়ান্তভাবেই বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আর টি–টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেবেন না। বিসিবি যদি চায়, টেস্ট এবং ওয়ানডে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন। তার এই ইচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে বিসিবিও। অর্থাৎ, আগামী মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরবর্তী টি–টোয়েন্টি সিরিজে নাজমুল বাংলাদেশের অধিনায়ক থাকছেন না।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও কাল এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘শান্ত (নাজমুল) ফাইনালি বলে দিয়েছে সে আর টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব করবে না। আমরাও এটা মেনে নিয়েছি। তবে যেহেতু আপাতত আমাদের টি–টোয়েন্টি খেলা নেই, হাতে সময় আছে; এখনই নতুন অধিনায়ক নিচ্ছি না। তবে যদি চোটের সমস্যা না থাকে, ওয়ানডে ও টেস্টে শান্তই অধিনায়ক থাকবে। সেভাবেই কথা হয়েছে।’
টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে এখনই কারও নাম ঘোষণা না হলেও কে আসতে পারেন নেতৃত্বে, সেটা অলিখিতভাবে ঠিক হয়ে আছে। গত মাসে লিটনের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩–০–তে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আসার পর বিসিবির জন্যও সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে মার্চে বাংলাদেশের পরবর্তী টি–টোয়েন্টি সিরিজে লিটনই নামবেন হয়ত টস করতে। সমান্তরালে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম যে নেই, তা নয়। সেটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক ঠিক করার আলোচনাতেও। তবে টি–টোয়েন্টি দলে মিরাজের জায়গাটাও প্রশ্নবিদ্ধ।
গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময় প্রথম জানা গিয়েছিল, ‘ব্যক্তিগত’ কারণে নাজমুল কোনো সংস্করণেই আর অধিনায়কত্ব করতে চান না। ‘ব্যক্তিগত’ কারণ বলতে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। যদিও অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ব্যাটিং নিয়ে কিছু সমালোচনা হলেও মাঠে নাজমুলের নেতৃত্ব প্রশংসিতই হয়েছে সব সময়। অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরও বিসিবির তাকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করার কারণও এটাই।
নভেম্বরের শুরুতে শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও তাই নাজমুলকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু কুঁচকির চোটে পড়ে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটা খেলতে পারেননি তিনি, যেতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে আপৎকালীন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মিরাজ। আর টি–টোয়েন্টিতে তো ‘ম্যাজিক’ই দেখালেন অধিনায়ক লিটন!
উল্লেখ্য, বর্তমানে নাজমুল শান্ত ব্যস্ত আছেন বিপিএল দল ফরচুন বরিশালের হয়ে। বিপিএলের পর সবকিছু ঠিক থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে টস করতে নামবেন শান্ত।