ধনী দশ ক্রিকেট বোর্ডে বাংলাদেশ কততম?

বিশ্বের অন্যান্য খেলার মতো, ক্রিকেটেরও একটি গভর্নিং বোর্ড রয়েছে, যা খেলাটির প্রশাসন ও অর্থ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ক্রিকেট বোর্ডগুলো টুর্নামেন্ট আয়োজনে, খেলোয়াড়দের চুক্তি পরিচালনায় এবং সম্প্রচার অধিকার ও স্পন্সরশিপের মাধ্যমে রাজস্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আছে ইন্টার‌ন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল, আইসিসি। যা বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট খেলার তত্ত্বাবধান করে।

আইসিসি ছাড়াও, প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের নিজস্ব ক্রিকেট বোর্ড রয়েছে। তো, চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সেরা ১০টি ধনী ক্রিকেট বোর্ড।

১০/ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি)

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের দশম ধনী বোর্ড। আয়তন, জনসংখ্যা কিংবা দর্শক সমর্থনের বিচারে ছোট ক্রিকেট দেশগুলির একটি হলেও, তাদের নেট মূল্য ৯ মিলিয়ন বা ৯০ লাখ ডলার। এই মুহুর্তে বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় একশ কোটি। এটি মূলত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে টিম নিউজিল্যান্ডের ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফরম্যান্স এবং স্পন্সরদের আকর্ষণ করার এবং সুরক্ষিত সম্প্রচার চুক্তির কারণে ঘটেছে।

৯/ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (ডাব্লিউআইসিবি)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের নবম ধনী ক্রিকেট বোর্ড, যার নেট মূল্য এক কোটি ৫০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের মতোই, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজস্বের ক্ষতি দেখেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রিকেট দলগুলির মধ্যে একটি ছিলো, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁদের পারফরম্যান্সে দ্রুত পতন ঘটেছে। তাদের আয়ের একমাত্র প্রধান উৎস ২০১৩ সালে শুরু হওয়া সিপিএল (ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) থেকে সম্প্রচারের অধিকার।

৮/ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)

শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ আর্থিক অস্থিতিশীলতার কারণে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের রাজস্ব এবং স্পনসরশিপ হ্রাস পেয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যতম সেরা ক্রিকেট দল ছিল; তবে, রাজস্ব হ্রাস ক্রিকেটার এবং তাদের ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বোর্ড সক্রিয়ভাবে তাদের রাজস্ব বাড়ানোর উপায় খুঁজছে এবং দলের জন্য কিছু স্পন্সরশিপ খোঁজার চেষ্টা করছে। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ডলার।

৭/ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড (জেডসিবি)

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের সপ্তম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। একটি খেলা হিসেবে ক্রিকেট ধীরে ধীরে তবে নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার দেশটির ক্রীড়াপ্রেমীদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। তিন কোটি আশি লাখ ডলার নেট মূল্যের সাথে, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড তাদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর উন্নতি এবং খেলাধুলায় আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

৬/ ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ)

ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার নেট মূল্য চার কোটি সত্তর লাখ ডলার এবং অর্থের দিক দিয়ে তারা বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ক্রিকেট বোর্ড। সিএসএ-এর একটি শক্তিশালী ঘরোয়া কাঠামো রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লিস্ট-এ ক্রিকেট এবং বেটওয়ে টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ আফ্রিকান বোর্ড ২০২৩ সালে এসএ টি-টোয়েন্টি চালু করেছে, যা বোর্ডের জন্য আরও বেশি রাজস্ব তৈরি করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

৫/ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। জাতীয় দলের সাফল্য এবং বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা, এর আয়ে অবদান রেখেছে। দেশটিতে ক্রিকেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জন্য তাঁদের কাছে আছে পাঁচ কোটি দশ লাখ ডলার।

৪/ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ডের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এছাড়াও তারা দ্বিতীয় ধনী এশিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রিকেটটা খুবই জনপ্রিয় এবং টিম পাকিস্তানেরও একটি বিশাল দর্শক ভিত্তি গড়ে উঠেছে। পিসিবি-র আয়ের পিছনে একটি কারণ হল পিএসএল (পাকিস্তান সুপার লিগ), যা ২০১৬ সালে চালু হয়েছিল। পিসিবি-র নেট মূল্য পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশটিতে অন্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো সফর না করার পরও তাদের আর্থিক ভিত্তি অন্যদের চমকে দেয়ার মতোই বড় ঘটনা। এটা নিয়ে আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

৩/ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের তৃতীয় ধনী ক্রিকেট বোর্ড। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ধারাবাহিকভাবে একটি বড় ফ্যানবেস উপভোগ করে এবং তারা তিনটি ফরম্যাটেই স্টেডিয়ামে প্রচুর ভিড় পায়। বিশেষকরে টেস্ট ক্রিকেটে অন্য দেশগুলোতে যেখানে দর্শক কম পায় সেখানে ইংল্যান্ডের গ্যালারিতে থাকে উপচেপড়া ভীড়। তাদের নেট মূল্য ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

২/ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ক্রিকেট বোর্ড, যাদের মোট অর্থের পরিমাণ সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড দ্বারা আয়োজিত বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল), আইপিএলের পর বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা। মজার তথ্য হচ্ছে, জনপ্রিয়তার বিচারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারিতে নেই।

১/ বোর্ড অফ কাউন্সিল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)

এক বছরে বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আয় করে বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। বোর্ড অফ কাউন্সিল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া যা বিসিসিআই নামেই বেশি পরিচিত। দুইশ ২৫ কোটি ডলার নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের তকমা বিসিসিআইয়ের গায়ে।

তাদের বিশাল এই অর্থনৈতিক ভিত্তির মূল কারণটা হলো দর্শক ভিত্তি। বিশ্বের অন্যান্য দলের মধ্যে টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় ফ্যান-ফলোয়ারও রয়েছে। তাছাড়া, বিসিসিআই-এর ঘরোয়া লিগ, আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) এর বিশ্বব্যাপী ফ্যান ফলোয়িং তাঁদের ক্রিকেট বোর্ডের আয়কে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

যারা নানা সময়ে প্রশ্ন করেন, ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের ছড়ি ঘোরানোর কারণটা কি? তারা নিশ্চয়ই কারণটা বুঝতে পারছেন। অর্থনৈতিক শক্তিটাই ক্রিকেট বিশ্বে তাদের এই অবস্থানটা তৈরি করেছে।

Exit mobile version