ওল্ড ট্রাফোর্ডে চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ার পর ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে ফের জমে উঠেছে উত্তেজনা। যদিও সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড, তবে গিলের নেতৃত্বে ভারতও সিরিজ ড্র করার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছিল। তৃতীয় দিন শেষে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩২৪ রান, আর ভারতের প্রয়োজন ছিল ৯ উইকেট। ইতিহাস গড়লেই কেবল জয় সম্ভব ছিল।
তবে এই লক্ষ্য তাড়া করতে হলে ইংল্যান্ডকে পার করতে হতো শতাব্দীপ্রাচীন এক রেকর্ড। কেননা ওভালে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র ২৬৩ রান, যা এসেছিল ১৯০২ সালে। অর্থাৎ ১২৩ বছর আগের সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যেত।
তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ড ১ উইকেটে তুলেছিল ৫০ রান। ওপেনার জ্যাক ক্রাউলি (১৪) দিনশেষে মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছিল। অপরাজিত ছিল বেন ডাকেট।
ওলি পোপকে সঙ্গে নিয়ে দিনের সূচনা করেন বেন ডাকেট। নতুন দিনে দলীয় ৩২ রান যোগ হওয়ার পরে, অর্থাৎ দলীয় ৮২ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার বলে কট বিহাইন্ড হন বেন ডাকেট। এরপর নামেন জো রুট। ওলি পোপকে নিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই শুরু করেন।
কিন্তু দলীয় ১০৬ রানে সিরাজের বলে লেগ বিফোর হয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে ফেরেন ওলি পোপ। এই সময়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচ হয়তো খুব সহজেই বেরিয়ে যাবে। কিন্তু এসময় রুট আর নতুন ব্যাট করতে আসা হ্যারি ব্রুকের মাথায় অন্য কিছুই কাজ করছিল।
হ্যারি ব্রুককে সঙ্গে নিয়ে রুট করেন ২১১ বলে ১৯৫ রানের এক পার্টনারশিপ। যেখানে ব্রুক করেছেন ৯৮ বলে ১১১ রান। ওভালের উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে এই পার্টনারশিপ ছিল কাব্যের মতো।
দলীয় ৩০২ রানে আকাশ দ্বীপের বলে হ্যারি ব্রুক ক্যাচ আউট হওয়ার সময় মনে হচ্ছিল তারা কেকওয়াক চেইসের মতো করে বের করে নিয়েছে ম্যাচ। কিন্তু ৩৩২ রানের মাথায় বেথেল এবং ৩৩৭ রানের মাথায় রুট আউট হওয়ার পরে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৩৩৭-৬।
এসময় ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৭ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। এই মুহূর্তে ম্যাচ ছিল পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা অবস্থায়। দলীয় ৩৩৯ রানের মাথায় আরও ড্রামা যোগ হয় এই ম্যাচে। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৭৭তম ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার করা দ্বিতীয় বলে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন করে ভারত। সিদ্ধান্ত যায় তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে। ক্লিন ক্যাচের কনক্লুসিভ প্রমাণ না থাকায় আম্পায়ার আউট দেননি। ঠিক এই মুহূর্তেই আলো সমস্যা আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ করে দেন আম্পায়ার। ভারতের সমর্থকেরা পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে ‘বু’ দিচ্ছিলেন এই ঘটনায়। কারণ, মোমেন্টাম ছিল তখন ভারতের পক্ষে। যদিও ক্ষণিক পরেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়, যা চতুর্থ দিনের খেলার ইতি টানার নিশ্চয়তা দেয়।
ক্রিকেটের এমন এক মহাকাব্যিক দিনে কী ছিল না মাঠে! সমর্থকদের আবেগ আর কিছুক্ষণ পরপর মোমেন্টাম শিফট—সবকিছুই ছিল এই দিন জুড়ে। ২০ জুন শুরু হওয়া এই সিরিজের ফলাফল নির্ভর করছিল আজকের এই দিনটির উপর। কোটি ক্রিকেটভক্ত তাকিয়ে ছিল আজকের দিনটির দিকে।
এতকিছুর পরেও এই মহাকাব্যের শেষ অধ্যায়টা আজকের দিনে দেখা হলো না ক্রিকেটপ্রেমীদের। আগামীকাল অর্থাৎ টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে শেষ অংশটুকুর জন্য। যেখানে ইংল্যান্ডের দরকার ৩৫ রান আর ভারতের দরকার ৪ উইকেট।
