মাঠে বিশেষ জুতা পরার অনুমতি না পেয়ে কালো আর্মব্যান্ড পরে নেমেছেন খাঁজা

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন চলমান। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই। ক্রীড়াঙ্গনেও যার নজির দেখা যাচ্ছে।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত এই মুসলিম দেশটিকে সমর্থন জানাতে চেয়ে বিশেষ জুতা পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজা। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি।

গতকাল ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন খাজা। যেখানে তিনি আবেগঘন এক বার্তা দিয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি আইসিসির দৃষ্টিভঙ্গী এবং সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। কিন্তু আমি এটার অনুমতি নেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। ‘

পার্থে শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। ম্যাচের আগে অনুশীলনে আজকের ম্যাচে ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান’ স্লোগান সম্বলিত বিশেষ জুতা পরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানোর উপায়টির চর্চা করেছিলেন তিনি। তবে পার্থ টেস্টের প্রথম দিনে তাঁর পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি।

আজ অবশ্য প্রথম দিনে বল মাঠে গড়ানোর আগে গা গরমের সময় স্লোগানসংবলিত সেই জুতাটি পরেছিলেন খাজা। তবে সেই জুতার ওপর লেখা বার্তাটি টেপ দিয়ে ঢেকে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জার্সিতে পাঁচ হাজার রান করা এই ওপেনার।

তবে জুতা পরে খেলতে না দেয়ায় আজ বাঁ-হাতে কালো ‘আর্মব্যান্ড’ পরে নেমেছেন এই অস্ট্রেলিয়ান। যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৯৮ বলে ৪১ রান করে আউট হন খাজা।

আইসিসির চোখে খাজার বার্তাটি ‘রাজনৈতিক’। কিন্তু তিনি নিজে তা মানতে রাজি নন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, তার বার্তাটি শুধুই ‘মানবিক আবেদন’।

খেলা শুরুর আগে ফক্স স্পোর্টসের সাথে বিষয়য়টি নিয়ে কথা বলেছেন খাঁজা। সেখানে আইসিসিকে তাঁদের দ্বিচারী আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তিনি দাবি করেন, এর আগে আরো অনেক খেলোয়াড় খেলার মাঠে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হননি। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আমি আবেগপ্রবণ হচ্ছি না। এটা নিয়ে এমনিতেই প্রচুর আবেগ আছে সবার। যারা কথা বলতে পারছে না, তাদের হয়ে বিশ্বকে ব্যাপারটি জানানোর বাইরে আর কোনো লক্ষ্য নেই আমার।’

জুতায় বার্তা লেখার কারণে খাজা যেমন সমর্থন পেয়েছেন, বিপরীতে তাঁকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। এই সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান” কিংবা “স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার” কথার মধ্যে আমি কোনো বিতর্ক দেখি না। এটাকে কেন রাজনৈতিক বলা হচ্ছে, সেটাও জানি না। আমি যা বলেছি, সেটা লোকের পছন্দ না করার ব্যাপারটি আমার জন্য মেনে নেওয়া কঠিন। সবাই যে সবার কথায় একমত হবে, সেটাও আমি মনে করি না। তবে লোকে এসব কথায় অস্বস্তিতে আছে, ব্যাপারটা আমাকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে।’

আগেই অবশ্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা আমাদের দলের শক্তিশালী দিক যে, দলের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত ও ভাবনা আছে। আজ উজির (খাজা) সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি না, তার এ নিয়ে কোনো হইচই করার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমরা তার পাশে আছি।’

আইসিসির অনুমতি ছাড়া কোনো ক্রিকেটার ও ম্যাচ অফিসিয়াল বার্তা সম্বলিত কোনো সরঞ্জাম ও পোশাক ব্যবহার করতে পারবেন না। এর আগে ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে গাজার সমর্থনে ‘সেভ গাজা, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ রিস্টব্যান্ড পরেছিলেন মঈন আলী। এজন্য এই ইংলিশ অলরাউন্ডারকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি।

এর আগে ইউনিসেফের একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন খাজা। সেটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘মানুষের কি নিরপরাধদের হত্যার ব্যাপারে কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই? নাকি তাদের গায়ের রঙ কম গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে দিয়েছে? অথবা তাদের ধর্ম? এসব বিষয় অপ্রাসঙ্গিক যদি যদি আপনি সত্যিই সবাইকে সমান ভাবেন। ‘

অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে খাজা বলেছিলেন, কোনো প্রতিবাদ করছেন না তিনি। শুধুমাত্র মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আইসিসির কোনো নিয়ম ভাঙছেন না বলেও দাবি করেন তিনি। এর আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেমন আদিবাসী সম্প্রদায় ও এলজিবিটিদের পাশে ছিলো এটি ঠিক সেইরকমই।

Exit mobile version