মিরপুরে পিচের নতুন রূপকার টনি হেমিংয়ের স্লো উইকেট সমস্যা দুর করার মিশন শুরু

গামিনি ডি সিলভা যখন দেশে ফেরার পথে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার করছিলেন, তখনই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পৌঁছান টনি হেমিং। দুই বছরের নতুন চুক্তিতে তার দায়িত্ব বিশাল—দেশের সব আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেট ভেন্যুতে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি, আন্তর্জাতিক মানের কিউরেটর গড়ে তোলা এবং মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।

প্রথম লক্ষ্য মিরপুরের দীর্ঘদিনের ‘স্লো’ উইকেট সমস্যা দূর করা। দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই শেরেবাংলার বিভিন্ন পিচ ঘুরে দেখেন তিনি। আউটার মাঠে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই তার নজরে পড়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য—পিচের পাশে পুঁইশাকের বাগান! প্রধান মাঠকর্মী রকির কাছে অবাক হয়ে জানতে চান, ‘পিচের পাশে শাক কেন?’ প্রথমে মজা করে বলেন, ‘এই শাক কে খায়?’ এরপর খানিক শ্লেষের সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোনো স্টেডিয়ামে কি পিচের পাশে সবজির বাগান দেখেছেন?’ প্রশ্ন শুনে আশেপাশের সবাই চুপসে যায়।

বিসিবি একাডেমি মাঠের উত্তর প্রান্তে মাঠকর্মীদের লাগানো পুঁই ও ঢ্যাঁড়শ গাছ অনেক দিন ধরেই আছে। কিন্তু গামিনি সেগুলো কখনও গুরুত্ব দেননি—১৫ বছরের সম্পর্ক বলে হয়তো। অথচ তার ক্যারিয়ার জুড়েই ছিল নানা বিতর্ক—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ঢাকার বাসায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ, এমনকি এবাদতের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি।

সবচেয়ে বড় ভুল ছিল একাডেমি মাঠের গ্রিন শেডে পিচ ভুলভাবে তৈরি করা। সাধারণত শেডের ভাঁজের সঙ্গে মিল রেখে ঢাল দেওয়া হয়, কিন্তু গামিনি উল্টোভাবে মাটি ফেলে পিচ ব্যবহার অযোগ্য করে তোলেন। ফলে বর্ষা মৌসুমেও গ্রিন শেড কাজে লাগেনি, বৃষ্টির মাঝেই খোলা মাঠে অনুশীলন করতে হয়েছে। এজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।

এই ভুলের পর থেকেই বোর্ডে তাকে সরানোর দাবি জোরালো হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজের উইকেট নিয়েও তীব্র সমালোচনা ওঠে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রকাশ্যে জানান, গামিনিকে মিরপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় বোর্ডের গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আনাম উদ্যোগ নেন টনি হেমিংকে ফেরানোর, আর বুলবুলও এতে পূর্ণ সমর্থন দেন।

হেমিংয়ের পিচ তৈরির অভিজ্ঞতা বিশাল—দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠের উইকেট থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার পার্থের পিচ পর্যন্ত তার হাতের কাজ। তবুও বিসিবি এখনই গামিনিকে বরখাস্ত করছে না। তিনি নিজে পদত্যাগ না করলে ঢাকার বাইরে অন্য ভেন্যুতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদিও গুঞ্জন শোনা গেছে, শ্রীলঙ্কায় ফেরার পর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন—তবে বিসিবির সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি সঠিক নয়।

Exit mobile version