মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে ২১৭ রানে হারালো বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিমের সাথে উইকেট নেয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করছেন হাসান মুরাদ

মুশফিকুর রহিমের সাথে উইকেট নেয়ার আনন্দ ভাগাভাগি করছেন হাসান মুরাদ

বাংলাদেশ জয়

সিলেট টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস ও ৪৭ রানে হারানোর পর মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ জয় পেলো ২১৭ রানের বড় ব্যবধানে। ফলে দুই টেস্টের সিরিজে আইরিশদের বিপক্ষে ২-০ তে জয় পেলো বাংলাদেশ।

আজ মিরপুরে বাংলাদেশের জয়টা নানা দিক থেকেই স্মরণীয়। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসবে মুশফিকের শততম টেস্ট আর সেই শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো, এই ম্যাচে বাড়তি রোমাঞ্চ যোগ করেছিলো। মিরপুরে শেষ দিনের সকালটা যেন বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষারই ছিল। অনেকে ভাবছিলেন প্রথম সেশনেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের টেল এন্ডাররা সেই হিসাব উলটপালট করে দেন।

পঞ্চম দিনে পুরো ৫৯.২ ওভার লড়ে ম্যাচ দীর্ঘায়িত করল তারা। বিশেষ করে কার্টিস ক্যাম্ফার, যিনি ২৫৯ বল খেলে মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড গড়ে অপরাজিত থাকলেন ৭১ রানে। শেষ পর্যন্ত যদিও তার প্রতিরোধ বাংলাদেশকে থামাতে পারেনি। ২১৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ২–০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে শান্তর দল।

গতকাল চতুর্থ দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৭৬। তখনই বাংলাদেশের জয় ছিল স্পষ্ট। কিন্তু আজ বাকি চার ব্যাটার দাঁতে দাঁত চেপে খেললেন ৫৯ ওভার। যেখানে আগের দিন তাদের টপ ও মিডল অর্ডার টিকেছিল ৫৪ ওভার।

সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানের জয়ের পর এই ম্যাচেও লাল বলের লড়াই শেষ হয়েছে স্বাগতিকদের আরেকটি প্রভাবশালী জয়ে।

এর আগে মিরপুরে একই ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডটি ছিল সাকিব আল হাসানের, ২১২টি। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন ক্যাম্ফার। ২৫৯ বলের ইনিংসটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। এর আগে তিনি করেছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। আয়ারল্যান্ডকে পঞ্চম দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে ক্রিজে বাঁচিয়ে রাখার নায়ক ছিলেন ক্যাম্ফার। ম্যাকব্রাইনের সাথে ১০৫ বলে ২৬, জর্ডান নিলের সঙ্গে ৮৫ বলে ৪৮ এবং নবম উইকেটে গ্যাভিন হোয়েরের সাথে ১৯১ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়ে ম্যাচকে লম্বা টেনে নেন তিনি।

গতকাল বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৯৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসের ২১১ রানের লিড মিলিয়ে আয়ারল্যান্ডের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৫০৯। সেই কঠিন লক্ষ্য তাড়া করেই সফরকারীরা দিন শেষ করেছিল ৬ উইকেটে ১৭৬ করে।

পঞ্চম দিনে তাইজুল ইসলামের হাতে ভর করে আসে প্রথম সাফল্য। দিনের ১৪তম ওভারে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন এলবিডব্লিউ হন ২১ রানে। এর মধ্য দিয়ে তাইজুল হন বাংলাদেশের প্রথম বোলার, যিনি টেস্টে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন। সপ্তম উইকেট ভাঙতেই ক্যাম্ফার ম্যাকব্রাইনের ২৬ রানের জুটির সমাপ্তি।

এরপর জর্ডান নিলের সঙ্গে যোগ হয় ৪৮ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ বোল্ড করে ভাঙেন সেই জুটি, যা তার দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম উইকেট। ২৩৭ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের দ্রুত জয়ের আভাস মিললেও ক্রিজে তখনও অটল ক্যাম্ফার। নবম উইকেটে হোয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে ম্যাচকে ড্রয়ের সম্ভাবনার দিকেও নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিরোধ ভাঙেন হাসান মুরাদ। হোয়েকে ১০৪ বলে ৩৭ রানে এলবিডব্লিউ করে ভেঙে দেন ১৯১ বলে ৫৪ রানের দীর্ঘ জুটি। পরের বলেই ম্যাথু হাম্প্রিসকে বোল্ড করে ইনিংস গুটিয়ে দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ এবং পুরো ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে উজ্জ্বল অভিষেক কাটালেন মুরাদ। তার সঙ্গে তাইজুলও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট, পুরো ম্যাচে মোট ৮। দুই টেস্ট মিলিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন তাইজুল।

অন্যদিকে মিরপুর টেস্ট ছিল মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ারের ১০০তম ম্যাচ। স্মরণীয় মাইলফলকটি তিনি রাঙিয়েছেন রেকর্ডময় ব্যাটিংয়ে। বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ রান (১০৬ ও ৫৩*) করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি।

Exit mobile version