কোলকাতার আরজি কর কাণ্ডে এবার সপরিবারের আন্দোলনে যোগ দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী। গতকাল বুধবার আন্দোলনকারীদের সাথে মেয়ে সানাকে নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলীকে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
এর আগে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেও নাচের স্কুল ‘দীক্ষা মঞ্জুরি’ থেকে বেহালা ব্লাইন্ড স্কুল পর্যন্ত পদযাত্রা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গাঙ্গুলীর স্ত্রী ডোনাও তাতে অংশ নেন। এইসময় তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদ ধর্ষণের বিরুদ্ধে। আমাদের নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে।’
এই পদযাত্রায় সৌরভ-ডোনা দম্পতির মেয়ে সানাও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপদ সমাজ চাই। এর জন্য যা যা প্রয়েজন তাই করবে। তবুও এটি (ধর্ষণ) বন্ধ করতে হবে। প্রতিদিনই আমরা কোন না কোন ধর্ষণকাণ্ডের কথা শুনছি। ২০২৪ সালেও এসে এমনটা দেখা কষ্টের। সানা জোর দিয়ে বলেন, ‘বিচারের দাবীতে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দোষীদের এমন শাস্তি দিতে হবে যেন অন্যরা এটি করার সাহস দেখাতে না পারে’।
কোলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ৩১ বছর বয়সি এক নারী চিকিৎসক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ওই চিকিৎসকের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
কিন্তু তার সহকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের দাবী ওই চিকৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ওই সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এই ঘটনায় সোচ্চার হয়। কলকাতা পৌর করপোরেশনের বিজেপি সমর্থিত কাউন্সিলর সজল ঘোষ এবং বিজেপি নেত্রী ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল হাসপাতালে গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। ৯ আগস্ট শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই ডাক্তারের মৃতদেহ আটকে রাখেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ও কোলকাতার পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে ছুটে যান। ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বিচার-বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দেন তারা। এরপরই বিক্ষোভকারীরা ময়নাতদন্তের জন্য ওই নারী চিকিৎসকের মরদেহ নিয়ে যান।
ময়নাতদন্তে ওই নারী চিকিৎসককে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের পাশাপাশি রক্তক্ষরণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব প্রমাণের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে কোলকাতা পুলিশ। এজন্য বিশেষ একটি টিমও গঠন করা হয়েছে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে টালমাটাল তৃণমূল সরকার। বিশেষকরে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সরকারের পতন চাইছে বিরোধীপক্ষ। সৌরভ গাঙ্গুলী শুরুতেই বিষয়টির নিন্দা জানালেও এর জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করা থেকে বিরত ছিলেন। এমনকি রাস্তায় নেমে আন্দোলনেও যোগ দেননি। এইনিয়েও সমালোচনার মধ্যে পড়েন গাঙ্গুলী।