দলীয় সংগ্রহ ২৯১ এর মধ্যে সৌম্য সরকারের ব্যাটেই এসেছে ১৬৯ রান। লক্ষ্যটা সহজ বানিয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। দলটার দুই ব্যাটার হেনরি নিকোলস ৯৫ ও উইল ইয়ং ৮৯ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় সহজ করে দেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় সৌম্যকে ম্যান অফ দি ম্যাচ ঘোষণা করা হয়।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে দলে জায়গা পাওয়ার নানা সমালোচনা, দীর্ঘদিন পর সেঞ্চুরি পাওয়াসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন সৌম্য। খেলা.লাইভের পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
সৌম্য: আমিতো প্লেয়ার, আমার তো খেলতেই হবে, ভালো করলে হয়তো ভালো নিয়ে লিখবেন, খারাপ করলে খারাপ নিয়ে লিখবেন। এটা আপনাদের কাজ আমার কাজ খেলা, সো আমি খেলছি। সেগুলা নিয়ে অতো ভাবা হয় নি, ভাবলে হয়তো নিজের উপর প্রেশার আসতো, বা নিজের উপর নেগেটিভিটি বেশি আসতো। আমি শুধু নিজের খেলার উপর বিলিভ করেছিলাম। আমার যেগুলা প্রসেস ছিল প্রসেসের উপর বিশ্বাস ছিল আমার।
প্রশ্ন: একটা টাফ টাইম যাচ্ছিল, তারপর আপনি টিমে এলেন, অনেক কথা বার্তা হয়েছে, সেশন করেছেন প্র্যাকটিস করেছেন, একসঙ্গে কাজ করার পর আপনার ভেতর যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পেলাম, ম্যাচেও তার প্রতিফলন দেখতে পেলাম, তিনি (হাথুরু সিংহে) কী এমন কাজ করেছেন বা কী বলেছেন যে আগের সাম্য কে ফিরে পেলাম।
সৌম্য: না, না। এমন কিছু না। আমি সৌম্য, সৌম্যই ছিলাম। জাস্ট হয়তোবা সে (হাথুরু সিংহে) আমাকে ভালো বোঝে, এই জন্য হয়তো এমন কিছু বলেছে যেটা আমার জন্য ক্লিক করেছে। কিন্তু আমরা কিভাবে দেখি সেটা হচ্ছে বড় বিষয়। আপনি একটা মানুষ কে দেখলে তার ভেতর অনেক কিছু নেগেটেভিটি পাবেন সো আপনি যদি শুধুমাত্র নেগেটিভিটি দেখতে চান তাই দেখতে পাবেন, পজেটিভ ভাবে দেখলে হয়তো পজেটিভ দেখবেন। ও হয়তো পজেটিভ দেখেন।
প্রশ্ন: আরেকটা বিষয় যা জানতে চাইছি যে যখন এসব নিয়ে এতো কথা বার্তা চলে তখন মানুষ হিসেবে নিশ্চয় খারাপ লাগে, খারাপ লাগত তখন আপনার হয়তো, সমালোচনা …।
সৌম্য: একটা সময় দেখতাম, লাস্ট এক বছর আমার ফোনে কোন নিউজ আসে না। যদি এমন হয় কোন ফেসবুক ফ্রেন্ড যদি ক্রিকেট নিয়ে কোন কথা বলে আমি তার সাথে থাকি না। যে পজেটিভ কথা বলে আমি তার সাথেই থাকি। পজেটিভ নিয়ে চিন্তা করি, ভাল খারাপ থাকবে, কিন্তু খারাপ করলে ক্রিকেট ছেড়ে তো চলে যেতে পারব না। যেহেতু ক্রিকেট প্লেয়ার, ক্রিকেটের জন্য এতদুর আসা.. ক্রিকেটের জন্য.. পরিশ্রম করছি ক্রিকেটের জন্য। ক্রিকেট নিয়েই বেশি চিন্তা করি।
প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ার খুব ওঠানামা করে দেখেছি, যে শুরুতে ভালো খেলেছেন আবার কামব্যাক করেছেন, এই যে ওঠানামা আপনার কি মনে হয় আপনার সমস্যা বা ঘাটতি কোথায় ছিল বলে মনে করেন?
সৌম্য: না ভাই, ওঠানামা কি, ক্রিকেট প্লেয়ার প্রতিদিন তো ভালো খেলবে না, আপনি যেমন একজন মানুষ প্রতিদিন ভালো খাবার একপেক্ট করেন না, তেমন প্রতিদিন আমরাও ভালো ক্রিকেট খেলবো এক্সপেক্ট করি না, অবশ্য আমরা ক্রিকেটার হাসির চেয়ে বেশি কাঁদি । কারণ আমরা যখনি খেলি , ফুল সিরিজ খেললে হয়তোবা দুইটা ম্যাচ ভালো খেলে বা বাকিগুলা খারাপই যায়। কিন্তু ওইটা নিয়েই যদি আমরা পরে থাকি, আমরা নিজেরাই পিছিয়ে যাবো। তাই পজেটিভ যতখানি আছে তাই নিয়ে চিন্তা করা হয় বেশি, কিভাবে সামনে আরও ভালো করা যায় সেদিকে ফোকাস করা হয় বা চিন্তা করা হয়। এর মধ্যেই কতখানি পারফেক্ট ভাবে করতে পারি সেই পারফেকশন নিয়েই ম্যাচে আমরা যাবার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: এতো সুন্দর একটা ইনিংসের পর স্কোর বোর্ডে যে রান হয়েছিল, সেটা কি যথেষ্ঠ ছিলো কি না? উইকেট কেমন ছিল, এইযে এই ম্যাচটা হারার পর সিরিজ পরাজয় এবং এই সেঞ্চুরিটা বিফল মনে হচ্ছে কিনা?
সৌম্য: অবশ্যই সেঞ্চুরিটা বিফল মনে হচ্ছে। যদি আমরা ম্যাচটা জিততাম তাহলে বিষয়টা আমার কাছে আরও ভালো লাগতো। ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগছে কিন্তু দিন শেষে সেই ভালো লাগাটা আর নেই। এটা দলীয় খেলা। দল জিতলে ভালো স্মৃতি থাকতো, তাছারা কিছু উইকেট দ্রুত চলে গেছে সেগুলো না হলে আরও ভালো পার্টনারশিপ করতে পারতাম। যখন মুশি ভাই বা মিরাজ আসার পর একটা পার্টনারশিপ হয়েছে সেগুলা আরও বড় করতে পারতাম, আবার মুশি ভাই মিরাজ যখন আউট হয়েছে তখন যদি তারা আউট না হতেন তবে আরও ৪০/৫০ রান যোগ করতে পারলে ৩০০ বেশি রান হলে চিত্রটা তখন অন্যরকম হতো। আর এটা মনে হয় নিউজিল্যান্ডের সাথে এটা আমাদের সর্বোচ্চ রান।
প্রশ্নঃ আজকের ইনিংস নিয়ে কিছু বলেন, আজকের ইনিংস এর আগে কোন প্রেশার ছিল কিনা, মেন্টাল সেট-আপ কেমন ছিল?
সৌম্য: প্রতিটা বল আসলে প্রেশার। একজন ক্রিকেটার একবারই সুযোগ পাই খেলার, একটা ভুল শর্ট খেললে সে আউট হয়ে যায়, এগুলা নিয়ে ভাবলে হবে না, হ্যা একটু সময় লেগেছে নেক্সট ট্রাই করার জন্য ,তো দুই একটা ভালো জিনিস ছিল যে ৫০ করার পর, তখন অনেকেই আউট হয়ে গেছিল সেই সময় হানড্রেড করেছি, নতুন করে প্ল্যান করে ইনিংসটা বড় করেছি। এর মাঝে অনেক সময় গেছি, কখনো আটকে গেছি ,কিছু সময় আবার কুইক রান করতে পেরেছি। সব মিলিয়ে ভালো ছিল।
প্রশ্নঃ খেলার পেছনে আপনাকে হেড কোচসহ যারা মটিভেট করেছেন তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
সৌম্য: প্রথমেই আমার পরিবারকে আমার স্ত্রীকে, টিমমেটদের এবং আসার পর থেকে যতখানি সময় পেয়েছি হাথুরুর সাথে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়েছি সে ছোট ছোট জিনিস গুলো ধরিয়ে দিচ্ছে।
প্রশ্ন: আজকের আগে পর্যন্ত শেষ যে ৫ টি ইনিংস খেলেছেন , তার তিন টাতে শূন্য রানে আউট হয়েছেন খারাপ গেছে সেসময়, এই সময়ে আপনার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?
সৌম্য: খারাপ খেললে সবারই খারাপ লাগে, কিন্তু ভালো করলে এই কথাগুলা আজকে শুনতে হতো না। তবে সৃষ্টিকর্তা যা দিয়েছেন এতেই সন্তুষ্ট, সেটা শূন্য হোক কিংবা আজকের এই ১৬৯ রান। যেভাবে উনি দিচ্ছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: আপনার যে যোগ্যতা বা স্কিল আছে কিন্তু যে কোণ কারণই হোক না কেন সেটা আপনি মেলে ধরতে পারেননি। সেটা নিয়ে কোন আফসোস আছে কিনা? দীর্ঘ সময় পর সেঞ্চুরি পেলেন। আবার কবে নাগাদ তিন অঙ্কের দেখা পাবো?
সৌম্য: নেক্সট ম্যাচেও হতে পারে। আফসোস বলতে , যেদিন ন্যাশনাল টিমে ঢুকেছি এটা চাইনি যে বের হবো এখান থেকে, এখান থেকেই রিটায়ার্ড করবো , তেমনই ইচ্ছে থাকে সবার। নিজে থেকে কখনো খারাপ খেলতে চাইনি। চাইব যেন ভবিষ্যতেও এভাবে কনটিনিউ করতে পারি, যতটুকু পারি নিজের উপর বিশ্বাস রেখে দলকে দিয়ে যাবার চেষ্টা করবো সব সময়।