সৌম্যের ১৬৯, আস্থা ও সমালোচনার জবাব!

২০১৯ সালের ৩১ জুলাই, জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি। ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, নিউজিল্যান্ডের নেলসন ১৬৯ রানের ইনিংস। মাঝে পেরিয়েছে লম্বা সময়। এই সময়টাতে সৌম্য পেয়েছেন একের পর এক সুযোগ। এই সুযোগ পাওয়া নিয়ে নিয়ে হয়েছে কঠোর সমালোচনা, বিতর্ক।

হওয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। অবশ্য যে কোন কোচই আসলে তাকে নিতে চান। কারণটাও স্পষ্ট। যে ধরনের শারীরিক সামর্থ্য থাকা দরকার তার সবই আছে বা হাতি এই ব্যাটারের। শুধু রানটাই ছিলো না ব্যাটে।

নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্যর ব্যাটে এসেছে দলের অর্ধেক রান। ২৯১ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে সৌম্যের সংগ্রহ ১৬৯।

সৌম্যের ইনিংসটি শুধু অসাধারণ বললে কম বলা হবে। অন্য প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছে তখন বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সুইয়ের বিপরীতে। পুরো ইনিংসে কিছুটা দীর্ঘ সময় সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। ৪৫ রান করেছেন মুশফিকুর। পঞ্চম উইকেটে ৯১ রানের জুটি ছিল তাদের।

এক পর্যায়ে মুশফিকও তাকে রেখে চলে গেলেও সৌম্য ছিলেন অবিচল। দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য যা করার তাই-ই করেছেন। দলের সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য যখন প্রয়োজন  তখন আক্রমণাত্মক হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হয়ে যান এই ওপেনার। আউট হলেও তার এই ঝলমলে ইনিংসটির মাহাত্ম কমেনি তার প্রমাণ তিনি মাঠেই পেয়েছেন। প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদের কাছ থেকে পেয়েছেন অভিনন্দন আর হাততালি।

দলে থাকতে হলে সাফল্যের সঙ্গে মিতালি করতে হবে- এটাই ধ্রুব সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকার চলছিলেন উল্টো পথে। সাফল্য নয় ব্যর্থতার সঙ্গে মিতালি করেছিলেন তিনি। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থতা। তারপরও দলে টিকে ছিলেন। সে জন্য কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হতে হয়তো চোখ কান বন্ধ করে রেখেছিলেন। আর অপেক্ষায় ছিলেন একটা সুযোগের, একটা দিনের। অপেক্ষায় ছিলেন মোক্ষম জবাব দেওয়ার।

সেই জবাবটা সৌম্য দিয়েছেন নেলসনে। বুধবার সকালে নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে হেসেছেন সাফল্যের হাসি। নিজেতো হেসেছেন, সে সঙ্গে দলের মানও বাঁচিয়েছেন।

সেই ২০১৯ সাল। সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই শ্রীলঙ্কা সফরে স্বাগতিক দেশটির বিপক্ষে ৬৯ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন। এ ইনিংটির আগে ও পরে অনুবীক্ষণ যন্ত্রেও তার একটা ভালো ইনিংস খুঁজে পাওয়া কঠিন। অবশ্য ২০১৯ সালটা ছিল সৌম্যর জন্য ঝলমলে একটা বছর।

২০১৯ সালে ১৭টি ইনিংস খেলেছিলেন সৌম্য সরকার। চারটি হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওই বছর।  একই বছর হাফ সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকও ছিল তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছিলেন। যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ ইনিংস ছিল সেগুলো। ৭৩, ৫৪ ও ৬৬। তারপর ৩১ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ রানের ইনিংস।

এরপর বিচ্ছেদ।  রানের সঙ্গে তো বটেই দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে সৌম্য সরকারের। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর আজকের ম্যাচ নিয়ে সৌম্য সরকার মোট ১০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। আগের ৯ ম্যাচের পরিসংখ্যান সৌম্য সরকার নিজেই লজ্জা পাবেন। তিন ম্যাচে কোনো রানই করতে পারেননি। এক ম্যাচে ১ রান করে বিদায় নিয়েছিলেন। অন্য এক ম্যাচে সংগ্রহ ছিল ৭ রান। আরেক ম্যাচে ৩২। তিন ম্যাচ ব্যাট করেননি।

এমন অবস্থা সত্ত্বেও কোচ হাথুরুসিংহে সৌম্য সরকারের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। নিউজিল্যান্ডে কন্ডিশনে সৌম্য ভালো করবে এমনটা জানিয়ে তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচে নিজের তো বটেই কোচেরও লজ্জা বাড়িয়েছিলেন। অবশেষে দ্বিতীয় ম্যাচে সেই আস্থার জবাব দিলেন ৬৫ ওয়ানডে খেলা সৌম্য সরকার।

চমৎকার এই ইনিংসে অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সৌম্য সরকার। হাথুরুসিংহের আস্থার জবাব দিয়েছেন। আর মুখ বন্ধ করেছেন সমালোচকদের।

সৌম্যের ক্যারিয়ারে এটা তৃতীয় সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসও বটে।

২০১৮ সালে চট্টগ্রামে সর্বশেষ তিন অংকের যাদুকরী রানের দেখা পেয়েছিলেন সৌম্য। ১১৭ রান করেছিলেন।

তার প্রথম সেঞ্চুরিটি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। মিরপুরে ২০১৫ সালে অপরাজিত ১২৭ রান করেছিলেন এই ওপেনার।

দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পাঁচ বছর পর এলো তৃতীয় সেঞ্চুরি। একেবারে ক্যারিয়ার সেরাও বলা যায়। ১৫১ বলে খেলেছেন ১৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস। পাওয়ার হিটিং সৌম্যর মূল শক্তির জায়গা। ক্যারিয়ার সেরা এই ব্যাটিংয়ে ২২ বার সীমানার বাইরে বলকে পাঠিয়েছেন। আর উড়িয়ে মেরেছেন দুইবার।

Exit mobile version