ভারতের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩, যা ১.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১১,৬৩৭ কোটি টাকা) অর্থনৈতিক অবদান রেখেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আজ একটি নতুন অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এই বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ক্রিকেট বিশ্বকাপ, যা ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ১০টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশ্বকাপটি আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, ধর্মশালা, হায়দরাবাদ, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই এবং পুনেতে আয়োজন করা হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র ক্রীড়া অনুরাগীদের আবেগকে জাগিয়ে তোলেনি, বরং ভারতের বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে পর্যটন, হোটেল, পরিবহন এবং আতিথেয়তা খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বকাপ আয়োজনের ফলে ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্বকাপ চলাকালীন পর্যটন খাত থেকে প্রায় ৮৬১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭,২২১ কোটি টাকা) আয় হয়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে হোটেল, ভ্রমণ, পরিবহন এবং খাবার-দাবার থেকে আয় এসেছে এই বিশাল অর্থ। দেশি এবং বিদেশি পর্যটকরা বিশ্বকাপ দেখতে আসায় ভারতের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। আন্তর্জাতিক দর্শকদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ প্রথমবারের মতো ভারতে এসেছিলেন, যার মাধ্যমে প্রায় ২৮১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৩৫৮ কোটি টাকা) আয় হয়েছে।
বিশ্বকাপের মাধ্যমে মোট অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রায় ৩৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৫১৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪,৩২৩ কোটি টাকা) ভারতের অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে, যা পর্যটন ও ভোক্তা খরচের ফলশ্রুতিতে এসেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অধিকাংশই ৫ দিনেরও বেশি সময় ভারতে অবস্থান করেছেন, যা পর্যটন খাতে আরো বড় প্রভাব ফেলেছে। ৬৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক দর্শক তাদের পরিবার ও বন্ধুদের ভারতকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে সুপারিশ করবেন বলে জানান।
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক ১.২৫ মিলিয়ন দর্শক উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই প্রথমবারের মতো আইসিসি পুরুষদের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখতে আসেন। এই বিশাল দর্শকসংখ্যা ভারতের ক্রিকেটের প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের আগ্রহ এবং ভালোবাসার প্রমাণ।
বিশ্বকাপ আয়োজনের ফলে ৪৮,০০০ এর বেশি পূর্ণকালীন এবং খণ্ডকালীন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আতিথেয়তা খাত এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা অর্থনীতিতে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৫০ কোটি টাকা) যুক্ত করেছে।
বিশ্বকাপ চলাকালীন ভারতের ১০টি শহরের বিশ্বব্যাপী প্রচার এবং মিডিয়া কভারেজের মাধ্যমে শহরগুলোর ব্র্যান্ডিং ও পরিচিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিটি শট, টিম কিটে ব্র্যান্ডিং এবং ভার্বাল উল্লেখের মাধ্যমে মিডিয়া প্রভাব হিসেবেও প্রায় ৭০.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকা) অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে।
একটি সার্ভের মাধ্যমে দেখা গেছে, স্থানীয়দের ৭৩ শতাংশ মনে করেন যে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত হয়েছে। আন্তর্জাতিক দর্শকদের ৫৯ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা ভবিষ্যতে আবারও ভারত সফর করবেন, যা ভারতের পর্যটন খাতের জন্য একটি সুসংবাদ।
আইসিসি প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস বলেন, “আইসিসি পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ প্রমাণ করেছে যে ক্রিকেটের অর্থনৈতিক শক্তি কতটা বিশাল। ভারতের অর্থনীতিতে ১.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এটিই প্রমাণ করে। এছাড়া, বিশ্বকাপ ভারতের একটি প্রিমিয়াম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে মর্যাদা বাড়িয়েছে।”
এই বিশ্বকাপ শুধু ভারতের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেনি, বরং দেশের ক্রীড়া এবং পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের বিশ্বমানের ক্রীড়া আয়োজনের দক্ষতা এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগ প্রমাণ করেছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩।