২০২৩ সালে ক্রিকেট বিশ্ব অনেক কিছু নিয়েই মেতে ছিলো। তাঁর মধ্যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সংস্করনের পাশাপাশি ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১৩তম আসর অন্যতম। এই দুইটি মেগা শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া আবারো পুরো বিশ্বকে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। ২০২৩ সাল নানা বিতর্কেও ঘেরা ছিলো। এর মধ্যে মুশফিকুর রহিমের অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড আউট কিংবা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের টাইমড আউট কখনোই ভোলার মতো নয়। ক্রিকেট বিশ্বের অনেক তারকা ২০২৩ সালে নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ২০২৩ সালে অবসর নিয়েছেন এমন ক্রিকেটারদেরকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
১/ ডোয়েন প্রেটোরিয়াসঃ ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি ডোয়েন প্রেটোরিয়াস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডার তিনটি টেস্ট ম্যাচ, ২৭টি ওয়ান ডে ম্যাচ এবং ৩০টি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। টেস্টে তিনি ব্যাট হাতে ৮৩ রান করেছেন এবং বল হাতে ৭ উইকেট নিয়েছেন। একদিনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ১৯২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৩৫ উইকেট নিয়েছেন প্রেটোরিয়াস। টি টোয়েন্টিতে তাঁর অর্জন সবচেয়ে বেশি। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ২৬১ রান ও ৩৫টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
২/ মুরলি ভিজয়ঃ ভারতের সাবেক ওপেনার মুরলি ভিজয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২৩-এর ৩০ জানুয়ারি। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের জার্সিতে ৬১টি টেস্ট, ১৭টি ওয়ানডে এবং ৯টি টি টোয়েন্টি খেলেছেন। ভিজয়ের টেস্ট রেকর্ডে ৩৯৮২ রান রয়েছে, যার মধ্যে ১২টি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতক আছে। একদিনের ক্রিকেটে ৩৩৯ রান করেছেন ভিজয় যেখানে তাঁর একটি অর্ধশতকও রয়েছে। টি টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ১৬৯ রান করেছেন তিনি।
৩/ ড্যান ক্রিস্টিয়ানঃ অজি ক্রিকেটার ড্যান ক্রিস্টিয়ান ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি সকল ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে ২৩ বার খেলেছেন, যেখানে তিনি ১১৮ রান সংগ্রহ করার পাশাপাশি বল হাতে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ২০টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনালে অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যেখানে তিনি ২৭৩ রান সংগ্রহ করেছেন এবং ২০টি উইকেট নিয়েছেন।
৪/ জেমস ফোকনারঃ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার জেমস ফোকনার ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসরকালে ক্রিকেট যাত্রায় ব্যাট ও বল হাতে অনেক অর্জন করে গেছেন এই অলরাউন্ডার। তিনি নিউজিল্যান্ডের জন্য ৬৬টি টেস্ট, ৮৮টি ওয়ানডে এবং ৫৮টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। এই কিউই ক্রিকেটার টেস্টে ব্যাট হাতে ৩০৪৪ রান এবং বল হাতে ১৪৭ উইকেট নিয়েছেন। একদিনের ক্রিকেটে ১৭৪১ রান করেছেন ফোকনার এবং ১১৭টি উইকেট নিয়েছেন। তার টি টোয়েন্টি পরিসংখ্যানে ৭৮৩ রান এবং ৩৮ উইকেট রয়েছে।
৫/ আলেক্স হেলসঃ ইংল্যান্ডের ওপেনার আলেক্স হেলসও এই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। ক্রিকেট থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেয়ার আগে ইংল্যান্ডের জন্য ৭০টি টেস্ট, ১৪২টি ওয়ানডে এবং ৬০টি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। টেস্টে ব্যাট দিয়ে ৪১৮৪ রান করার পাশাপাশি বল দিয়ে ১০টি উইকেট নিয়েছেন এই ইংলিশ ওপেনার। একদিনের ক্রিকেটে ৫৪২৭ রান এবং ১৮ উইকেট নিয়েছেন হেলস। তাঁর টি টোয়েন্টি পরিসংখ্যানে ১৬৫৮ রান এবং ৭টি উইকেট রয়েছে।
৬/ হাশিম আমলাঃ দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার হাশিম আমলা ২০২৩ সালে সকল ফরমাটের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ১২৪ টি টেস্ট ম্যাচে ৯,২৮২ রান করেছেন আমলা, যা তার দেশের জন্য শুধুমাত্র জ্যাক কালিসের পরে সর্বাধিক রান। সাদা জার্সিতে ২৮টি শতকের কীর্তি রয়েছে এই প্রোটিয়া ব্যাটারের। এছাড়াও টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি, যা টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ত্রিশতক ছিল। ১৮১টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৭টি শতকের সাহায্যে ৮,১১৩ রান করেছেন এই গ্রেট।
৭/ অ্যারন ফিঞ্চঃ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ১০০ টির বেশি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোনাম জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিঞ্চ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিঞ্চের অভিষেক হয়েছিলো ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টি-২০ ম্যাচে। এরপর থেকে তিনি মোট ৮,৮০৪ রান সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে ১৭টি ওডিআই শতক এবং দুটি টি-টোয়েন্টি শতক রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দলের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছেন এই ৩৬ বছর বয়সী, যার মধ্যে ২০১৫ সালের আইসিসি পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় এবং ২০২১ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ জয় অন্যতম।
৮/ স্টুয়ার্ট ব্রডঃ ইংল্যান্ডের জার্সিতে টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট পাওয়া স্টুয়ার্ট ব্রড ২০২৩ সালে নিজের অবসরের ঘোষণা দেন। তিনি তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেছিলেন ২০২৩ সালের অ্যাশেজে।
৯/ কুইন্টন ডি ককঃ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ শেষে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ওপেনার কুইন্টন ডি কক। আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন যে টেস্ট জার্সিতে আর দেখা যাবে না তাঁকে। তবে এখন থেকে শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবেন তিনি।
১০/ সুনীল নারাইনঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজের রহস্যময় স্পিনার সুনীল নারাইনও ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের জার্সিতে ৬টি টেস্ট, ৬৫টি ওয়ানডে এবং ৫১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই তারকা ক্রিকেটার। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অংশ ছিলেন তিনি।সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০১৯ সালে সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন সুনীল। ২০১৩ সালে তিনি শেষ টেস্ট খেলেছেন। এছাড়াও ২০১৬ সালের পর একটিও ওডিআই খেলেননি তিনি। লিস্ট এ ক্রিকেট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সুনীল। তবে নিয়মিত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দেখা যাবে নারাইনকে।
এই দশজন ছাড়াও আরো বেশ কিছু ক্রিকেটার ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। তাঁরা হলেনঃ
কামরান আকমল – ৭ ফেব্রুয়ারি
যোগিন্দর শর্মা – ৩ ফেব্রুয়ারি
মনোজ তিওয়ারি – ৩ আগস্ট
মঈন আলি – সর্বশেষ অ্যাশেজের পর
ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান – বিগ ব্যাশ ২০২৩ এর পর
আসাদ শফিক – ১১ ডিসেম্বর
স্টিভেন ফিন – ১৪ আগস্ট
নবিন উল হক – ২০২৩ বিশ্বকাপের পর
ডেভিড উইলি – ১ নভেম্বর
ইমাদ ওয়াসিম – ২৪ নভেম্বর