আটলান্টিক মহাসাগরের ১০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ক্ষুদ্র দেশ কেপ ভার্দে। বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে— দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ২৫ হাজারেরও কম, যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১ কোটি ৩ লাখ। সেই তুলনায় ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রই এবার বিশ্ব ফুটবলে ইতিহাস গড়েছে— দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের মূল পর্বে।
আফ্রিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সোমবার এসওয়াতিনির মুখোমুখি হয় কেপ ভার্দে। প্রাইয়ায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৩–০ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে ব্লু শার্কস খ্যাত দলটি। ‘ডি’ গ্রুপে তারা ১০ ম্যাচে জিতেছে সাতটিতে, সংগ্রহ ২৩ পয়েন্ট— যা তাদের গ্রুপের শীর্ষে তুলেছে। সমান ম্যাচে ক্যামেরুনের ১৯ ও লিবিয়ার পয়েন্ট ১৬।
ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও বিরতির পরই জয়ের পথ খুঁজে পায় স্বাগতিকরা। ৪৮ মিনিটে ছয় গজ দূরত্ব থেকে ডেইলন লিভ্রামেন্তোর গোলেই এগিয়ে যায় কেপ ভার্দে। ছয় মিনিট পর ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মিডফিল্ডার উইলি সেমেদো। ম্যাচের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডিফেন্ডার স্তোপিরা তৃতীয় গোল করে নিশ্চিত করেন দলের ঐতিহাসিক জয়। শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ হাজার দর্শকে ভরা স্টেডিয়াম মুখর হয়ে ওঠে উল্লাসে।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া নেভেসও। যদিও ম্যাচের শুরুটা ছিল হতাশায় ভরা— লিভ্রামেন্তো ও জামিরো মন্তেইরো প্রথম দিকেই গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। দ্বিতীয়ার্ধে লিভ্রামেন্তোর গোলে অবশেষে উদযাপনের সুযোগ পায় স্বাগতিকরা, এরপর সেমেদোর গোলেই যেন বিস্ফোরিত হয় আনন্দ।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত ক্ষুদ্র দেশ আগে একটিই অংশ নিয়েছিল— ২০১৮ সালে আইসল্যান্ড। এবার কেপ ভার্দে সেই পথ ধরে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়া এই দ্বীপরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সেও নজর কাড়ে; শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়ে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে কেপ ভার্দে রয়েছে ৭০তম স্থানে।
এর আগেই অবশ্য বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার সুযোগ এসেছিল তাদের সামনে। লিবিয়াকে হারাতে পারলেই ইতিহাস গড়া সম্ভব ছিল, কিন্তু ত্রিপোলিতে ৩–৩ গোলে ড্র করে ফেলে কেপ ভার্দে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে তারা গোল পেলেও তা অফসাইডের সিদ্ধান্তে বাতিল হয়, যা নিয়ে তীব্র বিতর্কও ওঠে। এরপর সমীকরণ দাঁড়ায়— শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত। অবশেষে এসওয়াতিনির বিপক্ষে তারা সেই হিসাবটা মিলিয়ে ফেলেছে দুর্দান্তভাবে!
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩

















