ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ইউরো চ্যাম্পিয়নেশিপের আরও একটি ফাইনালে হারলো ইংল্যান্ড। তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতলো স্পেন। নিকো উইলিয়ামসের গোলে ৪৭ মিনিটে লিড নেয় স্পেন। ৭৩ মিনিটে কোল পালমার ইংলিশদের সমতায় ফেরান। ৮৬ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় স্পেন। এবার গোল করেন মিকেল ওয়ারজাবাল।
পুরো আসরে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা স্পেন এদিনও ম্যাচের শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয়। ছোট ছোট পাসের টিকিটাকা ছন্দে ইংল্যান্ডের রক্ষণ সীমানায় বার বার ঢুকে পড়ছিলো। বাম প্রান্ত দিয়ে উইলিয়ামস ও কুকুয়েরা এবং ডানপ্রান্ত দিয়ে দানি কার্ভাহাল ও ইয়ামাল ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও প্রথমার্থে গোল পায়নি স্পেন।
এইসময় ইংল্যান্ডের প্রান্তেই বেশি খেলা হচ্ছিলো। বিশেষকরে রদ্রি ও ফাবিয়ান রুইজ স্প্যানিশদের আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। প্রথমার্ধে গোল না হলেও ৬৪ শতাংশ বলের দখল নিয়ে স্পেনই ছিলো এগিয়ে। অবশ্য এই সময়ে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল।
মজার ব্যাপার হলো বলের দখল কিংবা মাঠের নিয়ন্ত্রণে ইংল্যান্ড পিছিয়ে থাকলেও গোলবারে তারাই প্রথম শট নিয়েছে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ইংল্যান্ডের ফিল ফোডেন অন টার্গেটে শট নিলেও স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন সেটি সহজেই আটকে দেন।
গোলশূন্যভাবে শেষ হয় খেলার প্রথমার্থ। দ্বিতীয়ার্ধে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে স্পেন। রদ্রির জায়গায় খেলতে নামেন মিডফিল্ডার মার্টিন জুবিমেন্দি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিড নেয় স্পেন। ৪৭তম মিনিটে কারভাহালের কাছ থেকে বল রিসিভের পর ‘আন মার্কড’ নিকো উইলিয়ামসকে বল বাড়ান লামিনে ইয়ামাল। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি নিকো উইলিয়ামস। এই গোলের মধ্য দিয়ে ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়ে গেলেন নিকো। এদিন তার বয়স ছিলো ২০ বছর ২ দিন।
লিড নেয়ার পর ইংল্যান্ডকে রীতিমতো চেপে ধরে স্পেন। একের পর এক আক্রমণে ইংল্যান্ডের রক্ষণকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ইয়ামাল-নিকো উইলিয়ামস-দানি ওলমোরা। এসময় কোচ সাউথ গেটকে খেলোয়াড় পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন জুডে বেলিংহ্যাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে হ্যারি কেইনকে তুলে নিয়ে মাঠে নামানো হয় অলি ওয়াটকিন্সকে।
৭০ মিনিটে কোল পালমারকে মাঠে নামানো হয় কোব্বি মাইনুর জায়গায়। এই পরিবর্তন যেন ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। মাঠে নামার তৃতীয় মিনিটে বেলিংহ্যামের বাড়ানো বলে গোল করে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান পালমার।
নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট আগে অর্থাৎ ৮৬ মিনিটে স্পেনকে দ্বিতীয় দফা এগিয়ে দেন আরেক বদলি খেলোয়াড় মিকেল ওয়ারজাবাল। আলভারো মোরাতার বদলি হিসেবে ৬৮ মিনিটে মাঠে নামা ওয়ারজাবালের এই গোলে অবদান আছে দানি ওলমো ও কুকুরেলারও। স্পেনের দ্বিতীয় গোলটি ছিলো এই ত্রয়ীর সম্মিলিত আক্রমণের ফসল।
পিছিয়ে পড়ার পর ইংল্যান্ডের জোড়া আক্রমণ রুখে দেন স্পেনের গোলরক্ষক সিমোন ও দানি ওলমো। ডেক্লান রাইসের হেড সিমোন ফিরিয়ে দেয়ার পর ফিরতি বলে হেড করেছিলেন ইংলিশ ডিফেন্ডার মার্ক গুয়েহি। এবার তা ফিরিয়ে দেন দানি ওলমো। এরপর ডেক্লান রাইসের হেড বাইরে চলে যায় আর ইংল্যান্ডও হারায় তাদের শেষ সুযোগ।
২০২০ সালের ইউরোতে ঘরের মাঠে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিলো ইংল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের গোলে সমতায় ফিরেছিলো ইতালি। পরে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৩-২ গোলে জয় পায় আজ্জুরিরা। এবার আরও একটি ফাইনালে হারতে হলো ১৯৬৬’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
অন্যদিকে, ইউরোতে চতুর্থ শিরোপা জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলো স্পেন। এতোদিন তিনটি করে শিরোপা জিতে জার্মানির সাথে এককাতারে ছিলো লা ফুরিয়া রোজারা।