নেপালকে ৩-২ গোলে হারালো বাংলাদেশের মেয়েরা

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের নাটকীয় ম্যাচে নেপালকে ৩-২ গোলে হারালো বাংলাদেশ। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে উমেহ্লা মারমার পাসে তৃষ্ণা রাণীর গোলে জয় নিশ্চিত হয় পিটার বাটলারের শিষ্যদের।

বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় নেপালের বিপক্ষে প্রথমার্থে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫৫ মিনিটের সময় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের মোসাম্মত সাগরিকা ও নেপালের সিমরান সরাসরি লালকার্ড দেখেন। পরে দুই গোল শোধ করে ম্যাচে ফেরে নেপাল।

ইনজুরির কারণে ৭ মিনিট সময় যোগ করা হয়। খেলার একেবারে শেষদিকে তৃষ্ণা রাণী গোল করে বাংলাদেশকে পূর্ণ তিন পয়েন্ট এনে দেন। শেষ মূহুর্তে বাশি বাজার আগের এই গোল এনে দেয় নেপালের বিপক্ষে স্বাগতিকদের ৩-২ গোলের এক জয়।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ গোল করা বাংলাদেশকে আজ বেশ ভুগিয়েছে নেপাল দল। প্রথমার্ধের খেলায় ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় রক্ষণ বেশ এলোমেলোই ছিলো বাটলার শিষ্যদের। ৫৬ মিনিটের মাথায় দুই দলের উত্তেজনা গড়ায় হাতাহাতি ও মারামারিতে, এতে আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সাগরিকা লালা কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর ছন্দ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল। শেষ পর্যন্ত গোলের তৃষ্ণা মেটান তৃষ্ণা রানী।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম একাদশ থেকে দুই পরিবর্তন নিয়ে নেপালের বিপক্ষে দল সাজিয়েছিলেন ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার। উমেহ্লা মারমা ও রুপা আক্তারের পরিবর্তে শুরুর একাদশে জায়গা পান বর্ণা খাতুন ও শান্তি মার্ডি।

দলে পরিবর্তন আনা হলেও মাঠের খেলায় আক্রমণে কার্পণ্য দেখাননি মেয়েরা। ম্যাচের ১৩তম মিনিটে প্রথম গোল করেন সিনহা জাহান শিখা। টুর্নামেন্টে এটি তার দ্বিতীয় গোল।

গোল হজমের পর পাল্টা আক্রমণ বাড়ায় নেপাল, ২৭ মিনিটে নেপাল দলের ফ্রি কিক স্পেশালিষ্ট আনিশা রায়ের ফ্রি -কি প্রতিহত হয় গোল পোস্টে। এক মিনিট পর আরো একটি শক্তিশালী আক্রমণ নস্যাৎ করে গোলকিপার স্বর্ণা রানী।

৩৭ মিনিটে আবারো ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ দল, গোলটি করেন সাগরিকা। প্রথমার্ধ পর্যন্ত ফলাফল তখন ২-০।

বিরতির পর ম্যাচের ৫৬ মিনিটে মেজাজ হারিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান বাংলাদেশের সাগরিকা ও নেপালের সিমরান রায়। শুরুটা সিমরাইন করেন। কিন্তু শাস্তি হিসেবে রেফারি উভয়েকেই সরাসরি লাল কার্ড দেখান।

একজন করে খেলোয়াড় হারিয়ে উভয় দলই তাদের মাঠের কৌশলে পরিবর্তন আনেন। ৫৯ মিনিটে বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার একযোগে দুই খেলোয়াড় যথাক্রমে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার ও বন্না খাতুনকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান তৃষ্ণা রাণী ও রুমা আক্তারকে। অন্যদিকে ৬২ মিনিটে নেপালের কোচ একযোগে তিন খেলোয়াড় পরিবর্তন করান।

ম্যাচের বাকি সময় উভয় দলই ১০ জন নিয়ে খেলে। অবশ্য মাঠের খেলায় উভয় দলই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে গ্যালারি মাতিয়ে রাখে।

সাগরিকার মাঠ ত্যাগের পর বাংলাদেশের আক্রমণভাগে ছন্দপতন দেখা দেয়। উল্টো রক্ষণে চাপ বাড়ে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হন নেপালের মিনা দেউবা। নেপাল দল পেয়ে যায় গোল শোধের এক সুবর্ণ সুযোগ। পেনাল্টি তে নেপালের হয়ে প্রথম গোলটি করেন আনিশা রায়।

ম্যাচের সময় ৮০ মিনিট, ফলাফল বাংলাদেশ ২-১ নেপাল, তখনও আশা ছাড়েনি প্রতিপক্ষ নেপাল দল। ক্রমশ আক্রমণের ফলস্বরূপ ৮৭ মিনিটে সমতা আসে মিনা দেউবার গোল থেকে। বাংলাদেশের হাইলাইন ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে পূর্ণিমা রায়ের ক্রস থেকে গোল করেন মিনা। ৯০ মিনিটের নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ২-২।

অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় ৭ মিনিট। ২-২ গোলে ড্র ধরে নিয়ে নিশ্চুপ তখন কিংস অ্যারেনা। অপেক্ষা রেফারির শেষ বাশির। ঠিক তখনই স্তব্ধ গ্যালারিতে প্রাণ ফেরান তৃষ্ণা রানী। উমেহ্লা মারমার ক্রসে তৃষ্ণা নেপালের জালে বল ঠেলে দিয়েই মেতে ওঠেন বাধ ভাঙা উল্লাসে, সাথে যোগ দেন সতীর্থরাও। সাফ অনূর্ধ্ব ২০ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।

Exit mobile version