বুয়েন্স আয়ার্স মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে যখন আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত বাজছিল, পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে ছিল এক অনন্য আবেগ। প্রতীক্ষা শুধুমাত্র একজন মানুষের জন্য, যার নাম লিওনেল মেসি। এবং তিনি সেই অপেক্ষাকে মুগ্ধতায় রূপান্তরিত করে নিয়ে এলেন এক মহাকাব্যিক পারফরম্যান্স। আর্জেন্টিনা বলিভিয়াকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করলো, আর সেই জয়ের মূল কারিগর— মেসি, আর্জেন্টিনার জীবন্ত কিংবদন্তী।
মাত্র ১৯ মিনিটে সেই মহাকাব্যের প্রথম অধ্যায় শুরু। বলিভিয়ার ডিফেন্ডার মার্সেলো সুয়ারেজের ভুলে পাওয়া বলটিকে মেসি যেভাবে দখলে নিয়ে নিঃশব্দে বলটিকে নিচু শটে জালে পাঠালেন, সেই মুহূর্তে স্টেডিয়ামের প্রতিটি প্রান্তে শুধু বিস্ময় আর আনন্দের উচ্ছ্বাস! এ যেন মেসির এক চিরায়ত মূর্তিতে ফিরে আসা। ফুটবল ঈশ্বর তার প্রিয়তম মাঠে তার সেরা উপহারটি দিলেন।
এখানেই অবশ্য থামেনি সেই রাতের গল্প। ৪৩তম মিনিটে মেসির সেই চমৎকার ক্রস, আর লওতারো মার্টিনেজের নিখুঁত গোল। পুরো দল যেন মেসির ছন্দে নাচছে, তার প্রতিটি স্পর্শে যেন ফুটবলের এক নতুন সুর। এরপর প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে জুলিয়ান আলভারেজ যখন মেসির ফ্রি-কিক থেকে তৃতীয় গোলটি করেন, পুরো মনুমেন্টাল যেন এক অনন্ত উৎসবে পরিণত হলো। এই দৃশ্য শুধু খেলা নয়, এটি যেন জীবনের এক উদযাপন, মেসির পায়ের ছন্দে বয়ে যাওয়া এক মুগ্ধতা।
দ্বিতীয়ার্ধে থিয়াগো আলমাদা চতুর্থ গোলটি করেন। তবে, ফুটবল রূপকথার আসল নাটক শুরু হয় ম্যাচের শেষ মুহূর্তে। ৮৪তম মিনিটে যখন মেসি সেই পরিচিত ড্রিবল নিয়ে প্রতিপক্ষকে ছিটকে ফেলে নিখুঁত শটে গোল করলেন, পুরো স্টেডিয়াম যেন বিস্ফোরিত হলো। কিন্তু নাটকের চূড়ান্ত দৃশ্য তখনও বাকি ছিল—দুই মিনিটের ব্যবধানে আরেকটি অসাধারণ গোল। তার এই গোলের মাধ্যমে মেসি আবারও প্রমাণ করলেন, বয়স তার জন্য কেবল একটি সংখ্যা মাত্র। তার ফুটবলের জাদু আজও সেই একই—অতুলনীয়, অমর।
সেই মুহূর্তে, স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে যেন সময় থমকে দাঁড়িয়েছিল। অনেকের চোখে জল, আনন্দ আর গর্বের কান্না। মেসির এই অসামান্য পারফরম্যান্স কেবল একটি হ্যাটট্রিক নয়, এটি ছিল এক জাতির আবেগ, ভালোবাসা আর আশার প্রতীক। মেসি আজ শুধু ফুটবল খেললেন না, তিনি আর্জেন্টিনার জন্য একটি নতুন ইতিহাস রচনা করলেন।
আর্জেন্টিনা এখন ২২ পয়েন্ট নিয়ে কনমেবল তালিকার শীর্ষে, আর মেসি? তিনি আছেন তার নিজের তৈরি ফুটবল রাজ্যে, যেখানে তিনি চিরকাল রাজত্ব করবেন—ফুটবলের অমর রাজা হিসেবে।